ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে নিখোঁজের ২১ দিন পর ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার রাধাবল্লভপুর গ্রামের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের ভেতর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত হেলাল উদ্দিন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাধাভল্লবপুর গ্রামের মো. হাসিম উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, গত ১৮ জানুয়ারি ব্যবসার কাজে উচাখিলা বাজারে যান হেলাল উদ্দিন। প্রতিদিন রাতে বাড়িতে ফিরলেও ওই দিন তিনি বাড়ি ফেরেননি। সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। নিখোঁজের বিষয়ে ২০ জানুয়ারি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন নিখোঁজ ব্যবসায়ীর স্ত্রী মাজেদা খাতুন। কিন্তু ২১ জানুয়ারি রাতে ০১৯৬১-৬৮৫৯৬১ নম্বর থেকে হেলালের বড় ভাই মো. দুলাল মিয়ার মুঠোফোনে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়- ‘তোর ভাই কি হারানো গেছে? তোর ভাইকে আমরা নিয়ে গেছি। ফেরত পেতে হলে ২ লাখ টাকা লাগবে।’
তখন দুলাল মিয়া এতো টাকা দিতে পারবেন না বলে অনুনয় বিনয় করলে এক লাখ টাকায় রাজি হন ওই ব্যক্তি। উচাখিলা-লক্ষীগঞ্জ সড়ক থেকে টাকা নিয়ে যেতেও বলা হয়। ওই দিন কিছু দূর গিয়ে ওই নম্বরে কল দিয়ে তা বন্ধ পান দুলাল। ওই অবস্থায় বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ওই নম্বরটি নিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় উচাখিলা ইউনিয়নের মঘা গ্রামের নুর ইসলাম ও তার ছেলে আজিজুলকে আটক করে। ওই নম্বরটি নুর ইসলামের নামে থাকায় এবং ফোনটি আজিজুল ব্যবহার করায় তাদের আটক করা হয়।
কিন্তু ঘটনার অন্তত ১৫ দিন আগে ফোনটি হারিয়ে যাওয়ায় এবং তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ক্লু না পাওয়ায় পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় দুইজনকে ছেড়ে দেন। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একই গ্রামের আক্কাস ও আকাশ, কাঞ্চন, ফারুক, রিপন, খাইরুলকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে সিলেট থেকে উত্তম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, রাতেই উত্তমকে নিয়ে আমরা অভিযানে যাই। এ সময় উত্তমের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে রাধাভল্লবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের বাড়ির পেছনের পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে হেলাল উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজহাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নিহত হেলাল উদ্দিনের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তারা।