নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিলেটের সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতীয় গরু


দেশীয় পশু বিক্রেতাদের স্বার্থে এবার ঈদুল আযহা পর্যন্ত সীমান্ত পথে সব ধরণের পশু আমদানি নিষিদ্ধ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে নিওেষধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি পশু আমদানি। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন চোরাইপথে আসছে শতাধিক গরু। মাঝামাঝে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দু’একটি গরুর চালান আটক করলেও বেশিরভাগ সময়ই নির্বিঘ্নে দেশে গরু নিয়ে আসে চোরাকারবারিরা।

জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি গরু আসছে। আর সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়রাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসছে ভারতীয় গরু। বোশিরভাগক্ষেত্রে রাতেই আসছে ভারতীয় গরু। তবে কিছুকিছুক্ষেত্রে দিনেও গরু আনছে চোরাকারবারিরা।

প্রতিদিন আসা শতাধিক গরুর মধ্যে দু’একটি চালান আটক করে বিজিবি। সর্বশেষ গত রোববার আমদানিকালে ১১ ভারতীয় গরু জব্দ করে বিজিবি। জৈন্তাপুরের জঙ্গীবিল সীমান্ত দিয়ে আদমানিকালে গরুগুলো জব্দ করে বিজিবির লালাখাল ক্যাম্পের সদস্যরা।

এছাড়া গত ২ আগস্ট সুনামগঞ্জের বাঁশতলা সীমান্ত থেকে ৬টি গরু, ৩১ জুলাই দোয়রাবাজারের মাঠগাঁও সীমান্ত থেকে ৩টি গরু আটক করে বিজিবি।

সাম্প্রতিক সময়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আমদানিকালে ১৩৭ গরু আটক করা হয় বলে জানান বিজিবির ২৮ সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গরু আসা বন্ধ না হওয়ায় দেশের খামারিরা আর্থিক লোকসানে পড়বেন বলে জানিয়েছেন প্রাণীসম্পদ দপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আবুল কাশেম। তিনি জানান, সিলেট বিভাগে চাহিদা অনুযায়ী খামারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু আছে। এই বিভাগের ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন খামারির কাছে ২ লাখ ২ হাজার ৯০২টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু মজুদ রয়েছে সিলেট জেলায় আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। এতে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হতেন। কিন্তু ভারতে থেকে গরু চোরাইপথে আসায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এজন্য বিজিবির নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি তাঁর।

জানা যায়, ভারত কখনোই বৈধভাবে গরু রপ্তানি করে না। তবু প্রতিবছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে আমদানি হতো বিপুল সংখ্যক গরু। প্রতিবছরই বিজিবির সহযোগিতায় অবৈধভাবে আসা এসব গরু দেশে এসে বিশেষ প্রক্রিয়ায় বৈধ হয়ে যায়।

সিলেটের কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী জানান,  ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ঈদের মৌসুমে অবৈধভাবে গরু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। অবৈধভাবেভাবে আসা এসব গরু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আটক করতো বিজিবি। আটক করা গরুগুলো তাঁরা নিয়ে যেতেন নিকটবর্তী কাস্টমস অফিসে। এরপর কাস্টমস অফিসে প্রতি গরু বাবদ ৫০০ টাকা জরিমানা প্রদান করলেই অবৈধভাবে আনা গরুগুলো বৈধ হয়ে যেতো। তবে এজন্য বিজিবি সদস্যদের আলাদা করে টাকা দিতে হতো বলে জানানা ওই গরু ব্যবসায়ীরা। এবার মন্ত্রণালয় থেকে গরু আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর কাস্টমসে জরিমানা দিয়ে গরু বৈধ করার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে তবে বন্ধ হয়নি গরু আমদানি।

স্থানীয় সূত্র গুলো জানিয়েছে, সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, প্রতামপুর, সোনারহাট, কোম্পানীগঞ্জের উৎমা, জৈন্তাপুরের লালাখাল, ডিবির হাওর, কেন্দ্রিবিল, গুয়াবাড়ি, চিকনাগুলসহ বিভিন্ন সীমান্ত এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়রাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও ধর্মপাশার বিভিন্ন সীমান্ত প্রতিদিন দেশে আসছে শতাধিক ভারতীয় গরু। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ গরুই রাতে আনা হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সিলেটের জৈন্তাপুরের চিকনাগুল থেকে সিলেট নগরী পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অবৈধ হাট বসানো হয়েছে। এসব হাটেই তোলা হচ্ছে ভারত থেকে আনা চোরাই গরু। সব সমীন্ত দিয়েই গরু আমাদানির সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে গরু আমদানি আগের থেকে অনেক কমেছে বলে দাবি সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিজিবি’র ৩টি ব্যাটলিয়ানের অধিনায়কের। ৪৮ ব্যাটলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জামিল, ৫১ ব্যটলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সাঈদ ও ২৮ ব্যাটলিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র কঠোর নজরদারি থাকায় আগের থেকে গরু আনা অনেক কমেছে। তারপরও কিছু চোরাকারবারি গরু নিয়ে আসে। আমরা তাদের আটকের চেষ্টা করি।