নৌকা তৈরি করে জীবন চলে ২৫ পরিবারের

banglashangbad

নড়াইল সদরের ডহর রামসিধি গ্রামের ২৫ পরিবার নৌকা শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। এখানকার ডিঙ্গি নৌকা জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। চাহিদা থাকায় রামসিধি গ্রামেই গড়ে উঠেছে ডিঙ্গি নৌকার হাট। এখানকার দরিদ্র নৌকা শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে অনেক কষ্ট করে টিকিয়ে রেখেছেন। তারা বিসিক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পান না বলে জানান।

জানা যায়, সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডহর রামসিধি গ্রামের এসব পরিবার কয়েক পুরুষ ধরে নৌকা তৈরির সাথে জড়িত। আগে এসব নৌকা খুলনার আবালগাতি, নড়াইলের পেড়লি ও খড়রিয়া হাটে বিক্রি করতো। গত ১০ বছর ধরে গ্রামেই জেলার একমাত্র নৌকা বিক্রির হাট গড়ে উঠেছে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার গড়ে ৭০-৮০টি ডিঙ্গি নৌকা ওঠে। নড়াইলের বিভিন্ন এলাকাসহ খুলনা, মাগুরা ও যশোর থেকে বর্ষা ছাড়াও মাছের ঘেরে ব্যবহারের জন্য নৌকা কিনতে আসেন।

নৌকাশিল্পী নিখিল বিশ্বাস (৫০) বলেন, ‘গ্রামের মানুষ কয়েক পুরুষ থেকে এ পেশার সাথে জড়িত। আষাঢ় থেকে কার্তিক পর্যন্ত নৌকা গড়ে। একসময় নৌকা গড়ে প্রায় সারা বছর সংসার চললেও এখন পানি কমে যাওয়ায় নৌকার চাহিদা কমছে। এখন ৬-৭ মাসের বেশি সংসার চলে না। মৌসুমের শুরুতে একটি নৌকা ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হলেও এখন ৩ হাজার ৫শ টাকার বেশি বিক্রি হয় না।’

নৌকাশিল্পী শান্তিরাম বিশ্বাস (৬৫), শিশু সিকদার (৫৫) ও স্বপন বিশ্বাস (৬০) বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে কাঠ কিনতে কিছু লোন দরকার। এজন্য কম সুদে লোন পেলে অনেক উপকার হতো। একটি নৌকা গড়তে ৩ জন শ্রমিক প্রয়োজন। এসব নৌকা ২ বছর ভালো থাকে। তবে আলকাতরা লাগালে ৪-৫ বছর চলে।’

সুশেন মল্লিক (৪০) ও সঞ্জয় বিশ্বাস (৩৫) বলেন, ‘বর্তমানে এ পেশার প্রতি মানুষের ঝোঁক কমে যাচ্ছে। কারণ একদিকে চাহিদা কমছে, অন্যদিকে লাভও কম। অনেক সময় নৌকা অবিক্রিতও থেকে যায়। একটি নৌকা গড়তে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ পড়ে। অনেকে স্পেশালভাবে বেশি দাম ও ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করে।’

লোহাগড়া উপজেলার কুমড়ি গ্রামের ক্রেতা জমির শেখ বলেন, ‘বর্ষাকালে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাওয়া-আসা, ফসল আনা, মাছ ধরা, শাপলা তোলা, শামুক কুড়ানোসহ বিভিন্ন কাজে ডিঙ্গি নৌকা খুবই জরুরি। এসব নৌকা ব্যবহারের সুবিধা হলো একটি মাত্র বৈঠা দিয়েই এটা চালানো যায়। হালের প্রয়োজন হয় না। চলেও দ্রুত।’

বিসিক নড়াইল কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক এসএম নাদিম হোসেন বলেন, ‘রামসিধির নৌকা শিল্পের বিষয়ে শুনেছি। তাদের সাথে যোগাযোগ করব। নৌকা শিল্পের সাথে জড়িতদের বিসিক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *