বিশ্বকাপে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের কাছে হেরে গিয়ে তার সমাপ্তি ঘটলেও শেষটা রাঙানোর ইচ্ছা ছিল জয়ে। মাশরাফি মুর্তজার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচটা রাঙাতে পারেনি টাইগাররা। পাকিস্তানের কাছে হেরে গেছে ৯৪ রানে। ৩১৬ রানের লক্ষ্যে ৪৪.১ ওভারে ২২১ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতে সৌম্য সরকার ‘জীবন’ পেয়েছিলেন হারিস সোহেলের সৌজন্যে। মোহাম্মদ আমিরের বল তার ব্যাট ছুঁয়ে গেলে স্লিপে দাঁড়ানো হারিস তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। যদিও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশি ওপেনার। সেই আমিরের শিকার হয়েই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি।
৬ রানে ‘জীবন’ পাওয়া সৌম্য আউট হয়েছেন ২২ রানে। আমিরের বলে পয়েন্টে ধরা পড়েন তিনি ফখর জামানের হাতে। তার বিদায়ের পর তামিমও থিতু হননি বেশিক্ষণ ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে বোল্ড হয়ে ফিরেছিলেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তান ম্যাচেও একই পরিণতি। শাহীন আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে গেছেন বাঁহাতি ওপেনার। শাহীনের স্লোয়ারে পুরোপুরি পরাস্ত তামিম। বল তার ব্যাট ও পায়ের মাঝখান দিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। বোল্ড হওয়ার আগে ২১ বলে করেন তিনি মাত্র ৮ রান।
চাপে পড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিক। সাবলীল ব্যাটিংয়ে শুরুটা দারুণ হলেও বেশিদূর যেতে পারেননি মুশফিক। ওয়াহাব রিয়াজের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন ১৬ রানে। বল তার ব্যাটে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। তার ১৯ বলের ইনিংসে ছিল ২ চারের মার।
পরে ব্যাট করতে নামা লিটন দাসের শুরুটা বেশ ভালো হয়েছিল। বড় ইনিংসের আভাস ছিল তাতে। কিন্তু তা আর হয়নি শাহীন আফ্রিদির স্লোয়ারে ৪০ বলে ৩২ রান করে ফিরে গেলে। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রায় জুটি করার চেষ্টায় ছিলেন লিটন। ঠাণ্ডা মাথায় নিজের সঙ্গে দলের রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু শাহীনের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে কাভারে সহজ ক্যাচ দেন হারিস সোহেলের হাতে। তাতে চতুর্থ উইকেটে ভাঙে সাকিবের সঙ্গে তার গড়া ৫৮ রানের জুটি।
তবে অপরপ্রান্তে ঠিকই অবিচল থাকার চেষ্টা করেন সাকিব। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বিশ্বকাপ দুহাত ভরে দিচ্ছে তাকে। মাঠে নামলে অন্তত হাফসেঞ্চুরি পাচ্ছেন। ব্যতিক্রম হলো না পাকিস্তানের বিপক্ষেও। শাদাব খানের বলে ১ রান নিয়ে পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৭তম হাফসেঞ্চুরি। ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে খেলেছিলেন ৬৬ রানের ইনিংস। অবশ্য প্রত্যাশা ছিল সেঞ্চুরিরও। কিন্তু পারলেন না তিনি। ৬৪ রান করে আউট হয়ে গেছেন সাকিব।
শাহীনের বল তার ব্যাটে কানায় লেগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের গ্লাভসে। আউট হওয়ার আগে ৭৭ বলের ইনিংসটি সাকিব সাজান ৬ বাউন্ডারিতে। এবারের আসরে টানা সপ্তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাকিব। যাতে ৬০৬ রান করে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করার আগে আবারও বসেছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে।
তার আগেই অবশ্য সেমিফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষটা জয় দিয়ে রাঙিয়ে দেশে ফেরার লক্ষ্যে থাকলেও পাকিস্তান ছুঁড়ে দেয় কঠিন লক্ষ্য। লর্ডসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে করে ৩১৫ রান।টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারত ম্যাচের পর পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৫ উইকেট নিলেন তিনি। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১০০ উইকেটও পূরণ করেছেন মোস্তাফিজ। হারিস সোহেলকে ফিরিয়ে স্পর্শ করেন এই মাইলফলক। ৫৩ ইনিংসে তার উইকেট সংখ্যা এখন ১০৩। আর চলতি বিশ্বকাপে ২০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন তিনি। ২৪ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে মিচেল স্টার্ক।
সাইফউদ্দীন দলীয় ২৩ রানে ফখর জামানের উইকেট তুলে নিলেও সেখানে তারা ঘুরে দাঁড়ায ইমাম উলহক ও বাবর আজমের ১৫৭ রানের জুটিতে। বাবরকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করে এই জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দীন। বাবর ফিরে যান ৯৬ রান করে। তবে সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানকে বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন ইমাম-উল-হক। ১০০ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে দিয়েই শুরু মোস্তাফিজের উইকেট উৎসব। তাতে আরও বড় হতে পারেনি পাকিস্তানের ইনিংস। এরপর মোস্তাফিজ ফিরিয়েছেন হারিস সোহেল (৬), শাদাব খান (১), ইমাদ ওয়াসিম (৪৩) ও মোহাম্মদ আমিরকে (৮)। ১০ ওভারে ৫ উইকেট নিতে মোস্তাফিজ খরচ করেছেন ৭৫ রান। দ্বিতীয় সেরা বোলার সাইফউদ্দিন ৭৭ রান খরচায় পেয়েছেন ৩ উইকেট। পাকিস্তানের অন্য উইকেটটি নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।