পানিতে চুবিয়ে রোগীকে হত্যা, স্ত্রী-ছেলেসহ সেই ফকির গ্রেফতার


বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকায় চিকিৎসার নামে পানিতে চুবিয়ে কালাম মৃধা (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় ভণ্ড ফকির ও তার স্ত্রী-ছেলেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৮ এর সদস্যরা।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ভণ্ড ফকির রিয়াজ উদ্দিন (৪৮) তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার লাকি (৪২) ও ছেলে তৌহিদুর রহমান। তারা বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের বসিন্দা।

নিহত কালাম মৃধা পটুয়াখালী সদর উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের মৃত তুজম্বর মৃধার ছেলে। অভিযুক্ত রিয়াজ ফকির বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার সুলতান ফকিরের ছেলে।

র‍্যাব-৮ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর খান সজিবুল ইসলাম জানান, বন্ধাত্ব ও মানসিক রোগসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নামে সাধারণ জনগণের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। তারা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে টাকা, ছাগল, গরু, চাল, মুরগিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র গ্রহণ করতো। গ্রেফতারকৃত ৩ জনই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কালাম মৃধাকে পানিতে চুবিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাদেরকে বাকেরগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

কালাম মৃধার স্বজনরা জানান, কয়েকদিন ধরে কালাম মৃধা কথা কম বলতেন। একা থাকতে পছন্দ করতেন। বিষয়টি নিয়ে স্ত্রী পারভীন বেগম ও পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে স্বামীর চিকিৎসা করাতে দুই দেবরকে সঙ্গে নিয়ে রিয়াজ ফকিরের আস্তানায় যান তিনি। এ সময় ভণ্ড ফকির রিয়াজ ও তার সহযোগী চাচাতো ভাই অসীম ফকির ঝাড়ফুঁক করে কালাম মৃধাকে জিনে ধরেছে বলে জানান।

সেই সঙ্গে ভণ্ড ফকির রিয়াজ চিকিৎসা করে কালামকে ভালো করতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন। এতে স্ত্রী পারভীন বেগম রাজি হন। এরপর জিন তাড়ানোর জন্য কবিরাজি চিকিৎসার নামে কালাম মৃধাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন রিয়াজ। একপর্যায়ে পুকুরে ১০১ ডুব দেয়ানো হয়। সেই সঙ্গে পেটানো হয়। কাজ না হলে তাকে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এতে কালাম অসুস্থ হয়ে পড়লে একটি রুমে আটকে রাখা হয়। রাতে কালামের মৃত্যু হয়।

কালাম মৃধার স্ত্রী পারভীন বেগম বলেন, রাতে ভণ্ড ফকির রিয়াজ ও তার সহযোগী অসীম কালাম মৃধার মরদেহ বাড়ির পাশের বাগানে ফেলে রাখেন। ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে রাত ৩টার দিকে রিয়াজ ফকিরের বোন অনিকা বেগম আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। শনিবার সকালে আমাকে তার বাড়ি থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনিকা। এ সময় সন্দেহ হলে চিৎকার দেই আমি। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে কালামের খোঁজ করতে থাকি। পরে ভণ্ড ফকির রিয়াজের আস্তানার পাশের বাগানে কালামের মরদেহ পাওয়া যায়।

বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আবুল কালাম বলেন, কালাম মৃধা হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী পারভীন বেগম বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার ৩ জন ওই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। এর আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রিয়াজ উদ্দিনের বোন অনিকা বেগমকে গ্রেফতার করে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।