পেঁয়াজ আসে ৩৮ টাকায়, বিক্রি ১৮০ টাকায়


পেঁয়াজের দাম দুঃসহনীয়। ২৬০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ খেয়েছে মানুষ। এখন দেশি পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ভারত, মিয়ানমার, চিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনও বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। অথচ এই পেঁয়াজই বিদেশ থেকে আমদানি হয়েছে গড়ে মাত্র ৩৮ টাকায়!

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্যমতে, গত আগস্ট থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের বেশি সময়ে ১ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে ৪৭ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তারা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচে ১ লাখ ৪ হাজার ৫৫৮ টন, অর্থাৎ ১০ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে তাদের খরচ হয়েছে গড়ে ৩৮ টাকা ২৬ পয়সা।

এদিকে এই ৪৭ পেঁয়াজ আমদানিকারককে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। ৪৭ আমদানিকারকের মধ্যে সোমবার (২৫ নভেম্বর) ১০ জনের বেশি আমদানিকারককে ডাকা হয় এবং মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বাকিদের ডাকা হবে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কারা কারা পেঁয়াজ মজুত করে রেখেছে, আসলেই বেশি দামে বিক্রি করেছে কি না, কত দিন মজুত রেখে– এই জিনিসগুলো আমরা বের করার চেষ্টা করছি। বেশি লাভের আশায় না রেখে তারা যেন বাজারে ছেড়ে দেয়। তাহলে এর ইতিবাচক ফল আমরা সবাই পাব।’

এটা শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ করতে পারে কি না- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা সব বিভাগ একসঙ্গে কাজ করছি। দেশে এখন পর্যন্ত কত টন পেঁয়াজ মজুত আছে, সেটাই আমরা জানার চেষ্টা করছি।’

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ডাকে তাদের কার্যালয়ে এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমদানিকারক মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে আমদানি করার পর স্থলবন্দরের ফাঁকা ইয়ার্ডেই আমরা বিক্রি করি। এটা সবাই জানে। শুধু আমার বলে না, যতগুলো আমদানিকারক আছে, সবাই ওখান থেকে মাল বিক্রি করে দেন, মজুত করেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম অনেকটাই কমে যেত। স্থলবন্দরগুলো দিয়ে প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫-৬ হাজার মাল আসত। এখন তা সম্পূর্ণ বন্ধ। মিয়ানমার সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। প্লেনে আসছে দেখলাম ৮০ থেকে ১০০ টন মাল। যেখানে মাল আসত ৫-৬ হাজার টন, সেখানে ৮০ থেকে ১০০ টন মাল দিয়ে কভার করতে পারবে না। আমদানি অবশ্যই বাড়াতে হবে।’

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যানুযায়ী, যেসব আমদানিকারক গত সাড়ে তিন মাসে ১ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে সেগুলোর মধ্যে একতা শস্য ভাণ্ডার ১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা খরচে ৩ হাজার ৩৯৪ টন, এম/এস সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজ ১৩ কোটি ৬ লাখে ৩ হাজার ৪৪৮ টন, নূর এন্টারপ্রাইজ ১৬ কোটি ৩৩ লাখে ৪ হাজার ৪৩৮ টন, এম/এস আর এম অ্যাগ্রো ৯ কোটি ৮৬ লাখে ৪ হাজার ৭০০ টন, টিএম এন্টারপ্রাইজ ৩৯ কোটি ২৯ লাখে ৯ হাজার ২০ টন, বি এইচ ট্রেডিং অ্যান্ড কোম্পানি ১৪ কোটি ৭৯ লাখে ৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ৫০ টন, এম/এস ফুল মোহাম্মদ ট্রেডার্স ১৪ কোটি ৮ লাখে ৩ হাজার ৮৫ টন, এম/এস দীপা এন্টারপ্রাইজ প্রোপার্টিজ (প্রো: সুকুমার দাস) ১৭ কোটি ৭০ লাখে ৫ হাজার ৬৯৩ টন, জগদীশ চন্দ্র রায় ১৩ কোটি ৭৬ লাখে ৩ হাজার ৫৭৪ দশমিক ৫০ টন, এম/এস সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ ৯ কোটি ৩০ লাখে ২ হাজার ৯৩২ টন, এম/এস ফারহা ইন্টারন্যাশনাল ১১ কোটি ৫৩ লাখে ২ হাজার ৯৪৫ টন, হামিদ এন্টারপ্রাইজ ১৩ কোটি ২৩ লাখে ২ হাজার ৮৬৯ টন, আলী রাইস মিল ৯ কোটি ৬৮ লাখে ২ হাজার ৮৬৬ টন, খান ট্রেডার্স ৫ কোটি ৪৫ লাখে ২ হাজার ৮০৯ টন, এম এম কর্পোরেশন ৮ কোটি ১২ লাখে ২ হাজার ৪৭১ টন, এম/এস রহমান ইপপেক্স ৮ কোটি ১৭ লাখে ২ হাজার ২৫২ টন, এম/এস গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ ৮ কোটি ৭০ লাখে ২ হাজার ১০২ মেট্রিক টন, এম/এস রায়হান ট্রেডার্স ৩ কোটি ৭৯ লাখে ২ হাজার ১০০ টন, এম/এস সোহা এন্টারপ্রাইজ ৭ কোটি ৬৮ লাখে ২ হাজার ২৯ টন, এম/এস মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ ৭ কোটি ২০ লাখে ২ হাজার ২৮ টন, নূর ট্রেডার্স ৫ কোটি ৮৬ লাখে ১ হাজার ৮১০ টন, শামীম এন্টারপ্রাইজ ৬ কোটি ২০ লাখে ১ হাজার ৭৮৯ টন, এম/এস খান ট্রেডার্স ৯ কোটি ৭১ লাখে ১ হাজার ৬৭৬ টন, এম/এস এম আর ট্রেডার্স ৪ কোটি ৩৭ লাখে ১ হাজার ৬৪২ টন, ডি এ এন্টারপ্রাইজ ৯ কোটি ১৮ লাখে ১ হাজার ৬০০ টন, এম/এস টাটা ট্রেডার্সের ১০ কোটি ৬১ লাখে ১ হাজার ৫৩৬ টন, এম/এস মা এন্টারপ্রাইজ কোটি ৪১ লাখ খরচে ১ হাজার ৪৭১ টন, এম/এস হুদা ইন্টারন্যাশনাল ৭ কোটি ১০ লাখে ১ হাজার ৪৬৯ টন, সাহা বন্দর ৩ কোটি ৭১ লাখ খরচে ১ হাজার ৪৬৩ টন, আর ডি এন্টারপ্রাইজ ৫ কোটি ৮৯ লাখে ১ হাজার ৪৫৭ টন, জেনি এন্টারপ্রাইজ ৩ কোটি ৪৫ লাখে ১ হাজার ৪৩৮ টন, মাহি ও ব্রাদার্স এন্টারপ্রাইজ ৫ কোটি ৮১ লাখে ১ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৮৪ টন, এম/এস মুক্তা এন্টারপ্রাইজ ৭ কোটি ২৮ লাখে ১ হাজার ৩২৬ টন, এম/এস রায়হান ট্রেডার্স ৭ কোটি ৯৯ লাখে ১ হাজার ৩০০ টন, এম/এস সাইফুল এন্টারপ্রাইজ ৭ কোটি ৪১ লাখে ১ হাজার ৩০০ টন, রিজু রিতু এন্টারপ্রাইজ ৭ কোটি ২৯ লাখে ১ হাজার ২৭০ টন, এম/এস জাবেদ ও ব্রাদার্স ৪ কোটি ৭৩ লাখে ১ হাজার ২১৩ টন, এম/এস আলম ও সন্স ৫ কোটি ২২ লাখে ১ হাজার ১৫৮ টন, নিউ বড় বাজার শপিং ৫ কোটি ২ লাখে ১ হাজার ১৫৮ টন, এম/এস রচনা ট্রেডিং করপোরেশন ৩ কোটি ৬৮ লাখে ১ হাজার ১৫২ টন, এস এস ট্রেডিং ৪ কোটি ৯৪ লাখে ১ হাজার ১৩৩ টন, সুপ্তি এন্টারপ্রাইজ ৩ কোটি ৫৭ লাখে ১ হাজার ১১৩ টন, এম/এস ব্রাদার্স ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৫ কোটি ৬৪ লাখে ১ হাজার ১০৩ টন, আল মদিনা স্টোর ৪ কোটি ৬৯ লাখে ১ হাজার ৭৭ টন, বি কে ট্রেডার্স ৭ কোটি ৮৩ লাখে ১ হাজার ২৫ টন, ধ্রুব ফারিহা ট্রেডার্স ১ কোটি ৫৫ লাখে ১ হাজার টন এবং এম/এস সালেহা ট্রেডার্স ২ কোটি ২৯ লাখে ১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *