বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আলোচনা উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে।
মামলার সাক্ষী মিন্নিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে গ্রেপ্তারের পেছনে প্রভাবশালী কারও প্ররোচনা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন একজন সংসদ সদস্য।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শেষ না হলে এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।
গত ২৬ জুন বরগুনা শহরে রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যার সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে।
পরদিন শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকেই।
কিন্তু দুদিন আগে পুত্রবধূর বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলার পর আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
মঙ্গলবার মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির জড়িত থাকার ‘প্রাথমিক প্রমাণ’ তারা পেয়েছেন।
তদন্তের এই মোড় পরিবর্তন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বুধবার সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও তা আলোচনায় ওঠে।
কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বরগুনায় মিন্নিকে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটি তোলেন।
বৈঠক শেষে পীর ফজলুর বলেন, “হঠাৎ করে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করায় বিভিন্ন আলোচনা উঠেছে। আমি বৈঠকে বলেছি, মিন্নিকে কারও প্ররোচনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, সেই আলোচনাও বিভিন্ন মহলে উঠেছে। এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানতে চেয়েছি আমি।”
মিন্নির শ্বশুর দুলাল শরীফের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি সাব্বির আহমেদ নয়নের (নয়ন বন্ড) সঙ্গে বিয়ে গোপন করেই তার ছেলে রিফাত শরীফকে বিয়ে করেন মিন্নি। বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
তবে মিন্নি তা অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায়’ পড়ে তার শ্বশুর এখন তাকে জড়িয়ে ‘বানোয়াট’ কথা বলছেন।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি যে নয়ন বন্ড পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে পরে নিহত হন, তাকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ ছিল বরগুনার আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে।
এই হত্যাকাণ্ডের অন্য দুই প্রধান আসামি দুই ভাই রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে।
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর সন্দেহের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠেছিল। কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি তদন্ত পর্যায়ে আছে। এ নিয়ে উপসংহার টানার সময় এখনও আসেনি।”
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকু বলেন, “মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ঘটনার ‘বেটার’ তদন্ত চলছে। দোষী যেই হোক তাকে আইনের মুখোমুখি আনা হবে।”
কুমিল্লার জজ আদালতে এক আসামির ছুরিকাঘাতে আরেক আসামির নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটি বলেছে, আদালত প্রাঙ্গণে হত্যা আর অন্য স্থানে এ ধরনের ঘটনা এক করে দেখার সুযোগ নেই। কার দোষে এই ঘটনা ঘটল, তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফারুক (২৮) নামে এক আসামিকে ছুরি মেরে হত্যা করেন হাসান নামে আরেক আসামি।
ফারুক ও হাসান সম্পর্কে মামাত-ফুফাত ভাই। একটি মামলায় হাজিরা দিতে তারা এই আদালতে এসেছিলেন। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু এ বিষয়ে বলেন, “আমরা বিষয়টা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি। গভীর উদ্বোগ প্রকাশ করেছি। দেখতে হবে কার দুর্বলতা আছে। আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের ঘটনা আর অন্য কোথাও হত্যার ঘটনা এক নয়। জাতির জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তদন্ত কমিটি হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করতে বলেছি।”
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘মাদকাসক্ত সনাক্তকরণ ডোপ টেস্ট প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি চাকরিতে ডাকার সময় বাধ্যতামূলক ডোপটেস্ট করা হবে।
কমিটি রেল লাইনের পাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সুপারিশ করে।
বৈঠকে ব্যাটালিয়ন আনসার ফোর্সকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করা হয়।
শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মো. আফছারুল আমীন, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম দুদু, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পীর ফজলুর রহমান এবং সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বৈঠকে অংশ নেন।