ফাঁস হল ৩৫ রাষ্ট্র নেতা, ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা, শ খানেক ধনকুবেরের গোপন সম্পদের খবর


বিশ্বজুড়ে ৩৫ রাষ্ট্র নেতা, ৩০০ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তা, শ খানেক বিলিয়নেয়ারের গোপন সম্পদ ও লেনদেন ফাঁস করে দিল ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে) এর মাধ্যমে গ্রিক উপকথায় বিশ্বের প্রথম মানবী প্যান্ডোরার বাক্সের মতোই বেরিয়ে এসেছে বিশ্বের প্রভাবশালীদের গোপন সম্পদের খবর।

নথিগুলো নিয়ে বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের যৌথ অনুসন্ধান ‘বহু বাক্স খুলে দিচ্ছে’ বলে আইসিআইজে প্রতিবেদনের নাম দিয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স। ৯৫ হাজার অফশোর ফার্মের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি নিয়ে সাড়ে ছয়শর বেশি সাংবাদিকের পরিশ্রমে খুলেছে এই ‘প্যান্ডোরার বাক্স’।

করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, বেলাইজ, পানামা, সাইপ্রাসের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এসব তথ্য এসেছে।

এসব নথিতে মোট ৩৫ জন রাষ্ট্র নেতার তথ্য মিলেছে। আছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা। তাদের মধ্যে কেউ এখনও পদে বহাল, কেউবা সাবেক। ৩০০ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র, মিলিটারি জেনারেল।

যে একশ বিলিয়নেয়ারের তথ্য এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী নেতা, রক তারকা, বিনোদন জগতের তারকা। এদের অনেকে শেল কোম্পানির মাধ্যমে সম্পদ গড়েছেন, ইয়ট কিনেছেন, এমনকি পেইন্টিংও কিনেছেন।

গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় এই ঘটনা আবারও মেলে ধরেছে চোখের সামনে থাকা অর্থনীতির আড়ালের একটি চাঞ্চল্যকর চিত্র, যেখানে অফশোর অর্থনীতিতে বিশ্বের ধনকুবেররা কীভাবে তাদের সম্পদ লুকিয়ে রাখেন, কীভাবে কর না দিয়ে কিংবা নামমাত্র দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন।

লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ডের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য প্যান্ডোরার নথিতে এসেছে। তারা একটি অফশোর ফার্ম কিনেছিলেন, যার মালিকানায় ছিল ওই ভবনটি।

তালিকার আছেন জর্ডানের রাজা। তিনি গোপনে মালিবু এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন এবং লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে আটটি সম্পত্তি কিনেছেন।

এ সপ্তাহে নির্বাচনের মুখে থাকা চেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে ফ্রান্সের দক্ষিণে ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ডের দুটো ভিলা কেনার ক্ষেত্রে অফশোর কোম্পানিকে কাজে লাগানোর বিষয়টি চেপে গেছেন, তাও প্রকাশ পেয়েছে ফাঁস হওয়া নথিতে।

আজারবাইজানের ক্ষমতাসীন অলিয়েভ পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অর্থ লুকাতে এই পরিবার একটি বিশাল অফশোর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই পরিবার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ‍যুক্তরাজ্যে ৪০ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কেনাবেচায় কীভাবে জড়িত তা উঠে এসেছে, প্যান্ডোরার নথিতে।

এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে আছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা ও তার পরিবারের ছয় সদস্য, যাদের অফশোর কোম্পানি আছে।

গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের তালিকায় আরও আছেন সাইপ্রাস এবং ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট। বিশ্বব্যাপী এমন আরও অভিজাতদের গোপনে অর্থ স্থানান্তরের চিত্র উঠে এসেছে প্যান্ডোরা পেপারসে।

,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *