ফ্রি ভিসায় কুয়েতে এসে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরল সাব্বির


পরিবারের আর্থিক অনটন দূর করে একটু সচ্ছলতা আনতে ফ্রি ভিসায় কুয়েতে আসেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের সাব্বির আহমেদ জুয়েল। না, তিনি পারেননি পরিবারের অভাব-অনটন ঘোচাতে। নিঃস্ব হয়েই দেশে ফিরে গেলেন তিনি।

২০১৬ সালের অক্টোবরে কাজের উদ্দেশ্যে কুয়েত আসেন সাব্বির। শুধু সাব্বির নন, খাদেম ফ্রি ভিসায় এসে তার মতো প্রতিদিন এই রকম অনেকেই নিঃস্ব হয়ে ফিরে যায় যাচ্ছেন দেশে।

গত ২৬ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশি ইন কুয়েতের একটি পেজে সাব্বির আহমেদ নামে এক কুয়েত প্রবাসী পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘কুয়েতে ৮ লাখ টাকা দিয়ে এসেছিলাম ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে। দুই বছর পর ৮০০ দিনার দিয়ে আকামা লাগালাম। চার মাস যেতে না যেতে দালালের কথা শুনে কুয়েতে ঝামেলা শুরু করল। আবার টাকা দাবি করছে, না দিলে আকামা ক্যানসেল করে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে।’

পোস্ট দেখে সাব্বিরের সঙ্গে প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তিনি মেসেজে যা জানান, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘আমি সাব্বির, ১৪/১০/২০১৬ সালে ৮ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েতে আসি দালালের মাধ্যমে। দুই বছরের আকামা (থাকার অনুমতিপত্র) দেবে বলে কথা হয়েছে, কিন্তু এখানে আসার পর আমাকে এক বছরের আকামা দিয়েছে। পরে বলে আবার এক বছরর আকামা দেবে। যখন এক বছর শেষ হয়, তখন আমার কাছে আকামা দেয়ার জন্য আবার টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে অস্বীকার করলে, সে (দালাল) বলে, আমার আকামা দেবে না। তখন আমি ওনাকে চাপ প্রয়োগ করে আকামা দিতে বাধ্য করি।’

‘যা হোক, আমার কুয়েত লাইফে দুই বছর শেষ হওয়ার যখন আমি আবার দুই বছরের আকামার জন্য ৮০০ দিনার দিই। এর পাঁচ মাস পর মূল সমস্যার সম্মুখীন হই। তখন কুয়েতি আবার আমার কাছে ৬০০ দিনার দাবি করে। কুয়েতি বলে, যদি এই ৬০০ দিনার না দিই তাহলে আমার আকামা কেটে দেবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। আমার আকামা কেটে দিল। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম, আকামা কাটার পেছনে ভিসার দালালের হাত ছিল।’

‘এখন আমার একটাই দাবি, এই ভিসার দালালকে আইনের আওতায় আনা হোক, যাতে করে আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যেন পথে না বসে।’

এর তিনদিন পর সাব্বির আহমেদের ভাই দুর্জয় চৌধুরী দেশ থেকে বাংলাদেশি ইন কুয়েত পেজে জানান, তার ভাই সাব্বির আহমেদের কয়েকদিন ধরে খোঁজখবর নেই। সর্বশেষ মালিকের বাসায় গিয়েছিল পাসপোর্ট আনার জন্য। সম্ভবত দেশে ফিরে আসার জন্য। দুর্জয়ের ধারণা, মালিক সাব্বিরকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর দেশ হতে আবার মেসেজের মাধ্যমে প্রতিবেদককে সাব্বির জানান, ‘ভাই, ১৩ দিন জেল খেটে আজকে বাংলাদেশে আসলাম।’

যে আকামা অথবা ভিসা নিয়ে আসার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি মালিক বা কোম্পানির কাজ না করে অন্য মালিক বা কোম্পানির কাজ করে তাকে বলা হয় ফ্রি ভিসা। অসাধু ভিসা ব্যবসায়ী দালাল ও নিয়োগকর্তার মাধ্যমে এই ধরনের ভিসাগুলো বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। কুয়েতে ফ্রি ভিসার দাম ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশিরা এই ভিসায় আসতে বেশি আগ্রহী। আসলে এই নামে কোনো ভিসা হয় না। যেটা কুয়েতের স্থানীয় আইনে অবৈধ।

এক মালিকের ভিসায় এসে অন্য মালিকের কাজ করার সময় তল্লাশি করার সময় অথবা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে আটক হলে জেল-জরিমানা হতে পারে। জেল শেষে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। যেমনটা হয়েছে সাব্বিরের ক্ষেত্রে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *