বজ্রপাতের মওসুম শুরু


শুরু হয়ে গেছে বজ্রপাত। এবার ঘটলো ফাল্গুন মাসেই বজ্রপাত। সাধারণত গ্রীষ্ম-বর্ষায় আকাশে ঘন কালো মেঘ জমলে বজ্রপাত ঘটে থাকে। কিন্তু দিন দিন সেই চিরাচরিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ফাল্গুনের পঞ্চম দিনেই বজ্রপাতে নিহত হলো এক কিশোর। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এই ছাত্র এদিন বিকেলে মাঠে ক্রিকেট খেলারত অবস্থায়ই বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় তিনজন আহত হয়। একইদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও চারজন নিহত হয়েছেন বজ্রপাতে। বজ্রপাত আমাদের জন্য নিয়মিত আশংকার বিষয় হয়ে গেছে। আকাশে মেঘের গর্জনের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকালেই জনমনে সৃষ্টি হয় বজ্রপাতের আতংক। বিজ্ঞানীদের মতে, স্বাভাবিক ইলেকট্রিসিটির চেয়ে বজ্রপাতের ক্ষমতা কয়েক হাজার গুণ বেশি। ফলে বজ্রপাতে আক্রান্ত হলে মারা যাওয়ার আশংকাই বেশি থাকে।

বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সারা বিশ্বে বাংলাদেশেই বেশি। তবে দেশে বজ্রপাতে বছরে কতো জনের মৃত্যু হচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। প্রতি বছরই বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। জানা গেছে বর্ষা মওসুমে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪০টি বজ্রপাত আঘাত হানে। সাধারণত আবহাওয়ার পরিবর্তনে জলীয় বাষ্পে কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এজন্য আকাশে কালো মেঘ দেখলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ। তাছাড়া, গ্রামাঞ্চলে ফাঁকা জায়গায় বজ্রপাত বেশি হয়। তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে এসব জায়গায় উঁচু বাঁশের সঙ্গে বিদ্যুৎবাহী তার স্থাপন করা যেতে পারে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় দু’শ মাইল উচ্চতায় কালো মেঘের ওপরে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। আর এই কালো মেঘ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত। বর্ষা মওসুমের শুরু ও শেষ দিকে এই কালো মেঘের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এপ্রিল-মে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে বেশি। কিন্তু এবার শুরু হলো ফাল্গুন মাসেই।

বজ্রপাত প্রাকৃতিক দুর্যোগ; একে ঠেকানো যাবে না। সেই উপায় জানা নেই আমাদের। তবে এ ব্যাপারে সচেতনতাই সবচেয়ে জরুরি। তাই মওসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখলে সতর্ক হতে হবে। গুড়ুগুড়– মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া উচিত। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেয়া নিরাপদ। গাড়ির ভেতরেও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। তবে গাছের নীচে, টেলিযোগাযোগের খুঁটির পাশে বৈদ্যুতিক খাম্বার পাশে দাঁড়ানো নিরাপদ নয়। বজ্রপাতের আওয়াজ কানে আসার আগেই তা ভূমি স্পর্শ করে। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। এক্ষেত্রে শুকনো কাঠ ব্যবহার করা যেতে পারে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ে। আবহাওয়া বিভাগের উচিত যতো দ্রুত সম্ভব এই পূর্বাভাস জানানো জনগণকে। সর্বোপরি সর্বাত্মক সচেতনতাই বজ্রপাত থেকে মুক্ত থাকার সর্বোত্তম উপায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *