বাণিজ্য মেলার স্টলে ঠকঠক শব্দে বিরক্ত দর্শনার্থীরা


এক এক করে তিন দিনে পা দিয়েছে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। তবে এখনও মেলা প্রাঙ্গণের একটি বড় অংশে স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। এসব স্টলগুলো তৈরি সম্পন্ন করতে মেলার ভেতরেই চলছে কাজ। এতে মেলার উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পঞ্চিম সবদিক থেকেই হাতুড়ি, কাঠ, পেরেকের ঠকঠক শব্দ কানে আসছে। এতে বিরক্ত হচ্ছেন মেলায় আসা ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।

সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণের চারদিকেই অসম্পূর্ণ স্টল রয়েছে। এসব স্টলের মধ্যে যেমন দেশি স্টল রয়েছে, তেমনি বিদেশি প্যাভিলিয়নও রয়েছে। তবে দেশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ দেখা যায়নি। ফলে এসব স্টল মেলার প্রথম দিন থেকেই বিক্রির কাজ শুরু করেছে।

মেলা প্রাঙ্গণে সব থেকে বেশি অসম্পূর্ণ স্টল দেখা গেছে পশ্চিম দিকে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের প্রায় প্রতিটি স্টলের কাজই অসম্পূর্ণ রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিকেও বেশি কিছু স্টল অসম্পূর্ণ দেখা যায়। এর মধ্যে একাধিক বিদেশি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

অসম্পূর্ণ থাকা এসব স্টলের কাজ শেষ করতে স্টলের মধ্যেই একদল শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের কেউ হাতুড়ি দিয়ে কাঠে পেরেক ঠুকছেন। কেউ করাত দিয়ে কাঠ-বাঁশ কাটছেন। ফলে এসব স্টল থেকে এক নাগাড়ে বেরিয়ে আসছে ঠকঠক শব্দ। অথচ এসব স্টলের পাশেই অন্য স্টল পণ্য সাজিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।

মেলায় ঘুরতে আসা রায়ফা নামের একজন বলেন, ‘এটা আবার কেমন বাণিজ্য মেলা? মেলা শুরু হওয়ার পরও অর্ধেকের বেশি স্টলের কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে! যে দিকেই যাই স্টল তৈরির ঠকঠক শব্দ কানে আসছে। এটা খুবই বিরক্তিকর। আয়োজকদের উচিত মেলার শুরু হওয়ার আগেই স্টলের সব কাজ সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ নেয়া।’

আশাদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘আমরা শুনেছি মেলার স্টল অনেক আগেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে কারণে আমরা চেষ্টা করেও স্টল নিতে পারিনি। অথচ এখন মেলার মাঠে এসে দেখি বেশিরভাগ স্টলের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। স্টলের এ চিত্র দেখে তো সন্দেহ হচ্ছে, এসব স্টল আসলেই কি আগে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে? না কি অন্য কিছু ঘটেছে?’
বিদেশি প্যাভিলিয়নের একটি স্টল তৈরির কাজ করা মো. আফজাল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য। দু-একদিনের মধ্যেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে এই স্টলে কবে পণ্য উঠবে তা আমরা বলতে পারবে না। আমরা শুধু স্টল তৈরির কাজ করতে এসেছি।’

মেলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে একটি টিনশেডের স্টল তৈরির কাজ করা মো. রাজ্জাক বলেন, দুই দিন ধরে আমরা এই স্টলের কাজ করছি। কালকের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

এবার মেলায় প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৩০ টাকা। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের টিকিটের মূল্য আগের মতো ২০ টাকাই রাখা হয়েছে।

তবে টিকিটের দাম বাড়ানোর কারণেও কোনো কোনো দর্শনার্থীদের মধ্যে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আনোয়ার হোসেন নামের মিরপুরের এক বাসিন্দা বলেন, মেলার সেবা না বাড়িয়ে টিকিটির দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। ৪০ টাকার টিকিট কিনে মেলায় প্রবেশ করে স্টল তৈরির কাজ দেখতে হচ্ছে। আবার বিশ্রাম নেয়ার তেমন কোনো জায়াগা দেখছি না। আয়োজকদের উচিত এসব বিষয়ে নজর দেয়া।

মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন রাখা হয়েছে ৬৪টি। এছাড়া সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৯টি, প্রিমিয়াম মিনি প্যাভিলিয়ন ৪২টি রাখা হয়েছে।

মেলা প্রাঙ্গণে রেস্তোরাঁ থাকবে ২টি, স্ন্যাকস বুথ ৭টি, প্রিমিয়ার স্টল ৮৪টি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৬টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৮টি, সাধারণ স্টল ১০৭টি, ফুড স্টল ৩৫টি। পাশাপাশি বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি এবং বিদেশি প্রিমিয়াম স্টল রাখা হয়েছে ১৭টি।

বাংলাদেশের পাশাপাশি মেলায় থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, দুবাই, ইতালি ও তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

এবারের মেলায় ক্রেতারা যেসব পণ্য কিনতে পারবেন তার মধ্যে অন্যতম দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন সামগ্রী, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ঘড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইমিটেশন জুয়েলারি, সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, ক্যাবল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, আসবাবপত্র ও হস্তশিল্পজাত পণ্য, উপহার সামগ্রী, কনস্ট্রাকশন সামগ্রী, হোম ডেকর, বেকারি পণ্য, বিদেশি বস্ত্র ইত্যাদি।