সার্বিক অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন দেশে বেড়ে চলেছে বেকারত্ব। যেমন শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিতদের মধ্যে বাড়ছে বেকারের হার, তেমনি অশিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি সেক্টরে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে শ্রমশক্তি। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্বিগুণ গতিতে দৌড়ালেও কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাকা ঘুরছে উল্টোদিকে। সরকারের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো এক কোটি চার লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ৭৯ লাখ। এক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীদের দক্ষতার অভাবকে দায়ী করা যায়। সময়োপযোগী, কর্মমুখী শিক্ষা না থাকায় অনেক শিক্ষিত চাকরি প্রার্থী পাচ্ছে না চাকরি। যে কারণে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমানে সারা দেশে বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখ। এদের বেশির ভাগই শিক্ষিত। বছরে ২০ লাখের বেশি নতুন মুখ দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এই শ্রমশক্তিতে বাড়ছে উচ্চ শিক্ষিতদের অংশ গ্রহণ। যদিও তাদের বড় অংশই বেকার থেকে যাচ্ছে। চাকরির প্রতিযোগিতার বাজারে এখন একটি আসনের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থীকে প্রতিযোগিতা করতে দেখা যায়। কখনও তার চেয়েও বেশি। জরিপের তথ্য হচ্ছে, প্রতি একশ’ ¯œাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারের হার ১৪ শতাংশ। বিশ্বের ২০টি সর্বাধিক বেকারের দেশ-এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২। বিশ্বব্যাংকের মতে পড়াশোনা শেষ করে মাত্র এক শতাংশ কলেজ গ্রাজুয়েট চাকরি পাচ্ছে। আর কলেজ গ্রাজুয়েট পুরুষদের ৬৬ শতাংশই বেকার। নারীদের মধ্যে এই হার আরও বেশি। ৭৭ শতাংশ।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বেকারত্ব নিরসনের প্রতিশ্রুতিও ছিলো। সেই লক্ষে গ্রহণ করা হয়েছিলো পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। এখন নতুন করে নেয়া হচ্ছে একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এটি হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। এতে এক কোটি ২৯ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করছে সরকার। এর পাশাপাশি বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের দিকেও ঝুঁকতে হবে। কারণ, এটাই বাস্তবতা যে, প্রতি বছর শ্রমবাজারে যতো প্রার্থী যুক্ত হচ্ছে তাদের সকলকে সরকারের পক্ষে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়।