ডেস্ক রিপোর্ট :: খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) নতুন একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। যা পরিকল্পিত নগরায়ণে ভূমিকা রাখবে।
কেডিএর নতুন উদ্যোগটি হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম পাশে ১৭৩.৪৫ একর জমির মালিকদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ‘ভূমি পুনর্বিন্যাস প্ল্যান’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। এর ফলে সরকারি সাহায্য ছাড়াই ওই এলাকাটি এখন আকর্ষণীয় ও পরিকল্পনা মাফিক গড়ে উঠবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন উন্নয়নে ব্যয় হবে অন্তত ১৬০ কোটি টাকা।
কেডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষ অচিরেই এটির বাস্তবায়নে কাজ শুরু হবে। নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে শহরের পরিধি বাড়বে।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি জনবসতিতে পরিকল্পিত আবাসন এখন সময়ের দাবি। আবাসন নির্মাণে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার যাতে নিশ্চিত হয় সেদিকে কেডিএ’কে খেয়াল রাখতে হবে ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন আনুমানিক ১৭৩.৪৫ একর জমি রয়েছে। এ জমির উত্তর পাশে সংস্থাটি পরিকল্পিতভাবে ময়ূরী আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। পূর্ব পাশে খুলনা সিটি কর্পোরেশন লিনিয়ার পার্ক তৈরি করেছে। দক্ষিণ পাশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মৎস্য খামার ও আবহাওয়া অফিস রয়েছে। পশ্চিম পাশে সিটি বাইপাস সড়ক রয়েছে। চারপাশে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা এলাকার মাঝের স্থানটি দীর্ঘদিন অপরিকল্পিতভাবে পড়ে থাকায় ওই এলাকার সরকারি খালের জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়ে চলাচলের সড়ক পরিণত হচ্ছে। অপ্রশস্ত সড়কের পাশে স্থায়ী স্থাপনা ও জলাশয় ভরাট হয়ে বসতবাড়ি গড়ে উঠছে। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে জায়গাটি দিন দিন বস্তিতে পরিণত হচ্ছে।
অন্যদিকে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মৎস্য খামার, আবহাওয়া অফিস, ময়ূরী আবাসিক এলাকা ও লিনিয়ার পার্কের কারণে জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে জায়গাটির ভবিষ্যৎ গুরুত্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত নগরায়ণ জরুরি। সার্বিক দিক বিবেচনা করে ওই এলাকার জমির মালিকদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভূমি পুনর্বিন্যাস প্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে খেলার মাঠ, শিশু পার্ক, হাসপাতাল, উন্মুক্ত জায়গা, সাঁতারের জন্য পুকুর, গাড়ি পার্কিং, বনায়ন, খাল উদ্ধার ও নেটওয়ার্কিং, ওয়াকওয়ে, ড্রেন ও ফুটপাথ, আবাসিক বা অনাবাসিক প্লট, ফুড কোড, সুপার মার্কেট, মসজিদ, কবরস্থান, খুবি শিক্ষার্থী ডরমেটরি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পানির পাম্প হাউজের জন্য জায়গা, অটোরিকশা স্ট্যান্ড, জিমনেসিয়াম, কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব ও পাবলিক টয়লেট ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা।
কেডিএ এতদিন জমি অধিগ্রহণ করে বিভিন্ন পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের কারণে জমির মালিকরা তাদের জমিতে থাকতে পারে না। এতে একজন ব্যক্তি যে স্বপ্ন নিয়ে জমি কেনে তার স্বপ্ন আর পূরণ হয় না। তাদের সে স্বপ্ন পূরণে এবার কেডিএ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এ পরিকল্পনাতে ওই এলাকার যেসব নাগরিককে সুবিধা দেয়া হবে তার জন্য যে পরিমাণ জমি লাগবে তা সব জমির মালিকদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বন্টন করা হবে। এছাড়া ভূমি উন্নয়নের জন্য যে খরচ হবে তা প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্লট বা জমি সাধারণ জনগণের মাঝে বিক্রি করে জোগাড় করা হবে। এভাবে ভূমি উন্নয়ন করার অন্যতম সুবিধা হলো সব জমির মালিকরা প্লট পাবে, সরকারি সাহায্য ছাড়াই ভূমির উন্নয়ন হবে।
তবে যাদের জমির পরিমাণ কম তাদের কয়েকজনকে মিলে একটা প্লট দেয়া হবে। জমি কম এমন কেউ যদি নিজে একটা প্লট নিতে চায় তাহলে অতিরিক্ত জমির জন্য কাঠা প্রতি প্রকৃত উন্নয়ন খরচ জমা সাপেক্ষে একটা প্লট নেয়ার সুযোগ রয়েছে। অনুরুপভাবে যদি কেউ তার জমি না রাখতে চায় তাহলে সরকারি মৌজা দরে তার জমির সমুদয় অর্থ পরিশোধ করা হবে। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি আর কোনো প্লট পাবে না।
কেডিএ’র সহকারী টাউন প্ল্যানার আবু সাঈদ বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম পাশের আনুমানিক ১৭৩.৪৫ একর জমিতে গৃহীত ভূমি পুনর্বিন্যাস প্ল্যান টিও ওই পরিকল্পনারই অংশ। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে এলাকাটি খুলনার একটি আকর্ষনীয় স্থানে পরিণত হবে। জমির মালিকরা পাবে একটি পরিকল্পিত এলাকা। এছাড়া জমির দাম বেড়ে যাবে বহুগুণ, নির্মাণ করা যাবে বহুতল ভবন। ফলে আনুপাতিক হারে জমি যে পরিমাণে কমে যাবে তা জমির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে উপশম হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকার জমির মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, এরইমধ্যে অনেক জমির মালিক তাদের জমির মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য কেডিএ তে পাঠানো হয়েছে। মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য জমা হওয়ার পর প্রতিটি জমির মালিকের সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনাটি সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হবে। এরপর জমির মালিকের সঙ্গে কেডিএ’র চুক্তিপত্র হবে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী এলাকাটি উন্নয়ন করার পর প্রত্যেকের জমির অংশ তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।