বিদ্যালয়েই পুষ্টিকর খাবার পাবে শিশুরা


প্রাথমিক শিক্ষার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা ও ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে রান্না করা খাবার। এতে থাকবে দৈনিক পুষ্টি চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ ক্যালরি। এই কার্যক্রমের নাম দেয়া হয়েছে ‘মিড ডে মিল’।

মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে উপজেলার নিলফা বয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন।

অনুষ্ঠানে জাকির হোসেন বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষা হবে আমাদের প্রধান হাতিয়ার। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী স্কুল ফিডিং কর্মসূচিকে আরও উন্নত করে বিস্কুটের পরিবর্তে শিশুদেরকে রান্না করা খাবার দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। শিক্ষায় লক্ষ্য অর্জনে বাবা-মা ও শিক্ষকদের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সব সুবিধা দেয়া হবে। কিন্তু আপনারা ছেলেমেয়েদের মানুষ করে গড়ে তুলবেন।

সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, মা হলেন সন্তানের প্রথম শিক্ষক, আর শিক্ষক হলেন সন্তানের দ্বিতীয় মা। আমরা চাই, মা আর শিক্ষকের সমন্বয়। না হলে মানসম্মত শিক্ষা দেয়া এবং উন্নত, সমৃদ্ধ ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠন সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, মিড ডে মিলের সবচেয়ে লাভজনক দিক হলো, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমবে। শিক্ষার মান বাড়বে।

আকরাম হোসেন জানান, সপ্তাহে তিনদিন সবজি খিচুড়ি, বাকি তিনদিন বিস্কুট দেয়া হবে। প্রতিদিন প্রতিটি শিশুকে ৫৩৩ ক্যালরি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেয়া হবে। তবে যেদিন ডিম-খিচুড়ি দেয়া হবে সেদিন ৬৩০ ক্যালরি পাবে শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই, শিশুদের আর যেন ক্ষুধা নিয়ে ক্লাস করতে না হয়।

সচিব বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে দেশের ১৬টি উপজেলায় মিড ডে মিল কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ বছর পরিক্ষামূলক বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগামী বছর সারা দেশের স্কুলে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে।

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় ২০০০ সাল থেকে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চলছে। এর আওতায় শিশুরা পুষ্টিকর উন্নত বিস্কুট পাচ্ছে। এখন বিস্কুটের পরিবর্তে রান্না করা খাবার দেয়া হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমবারের মতো রান্না করা খাবার পেয়ে খুব খুশি নিলফা বয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মিতানুর, ফাতেমা, প্রথম শ্রেণির রোহান, চতুর্থ শ্রেণির শুভংকর জানায়, আগে তারা বিস্কুট পেত। অনেকে তা খেতে চাইতো না। এখন খিচুড়ি দিলে সেটা তাদের কাছে বেশ মজার হবে।

৩য় শ্রেণির ছাত্রী জামিলার মা নার্গিস আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার দেয়ার ফলে বেশি লাভবান হলেন মায়েরা। সকালে রান্না করার ঝামেলা থেকে তারা মুক্ত হলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আমরা খুবই খুশি যে, শিশুদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণের মতো মহতী এই কাজ টুঙ্গিপাড়া থেকে শুরু হলো। এই মাটিতে বঙ্গবন্ধু জন্মেছেন। তিনি এই মাটিতেই শুয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই মাটিতেই জন্ম নিয়েছেন। সেই মাটির শিশুদের ক্ষুধাকাতর অবস্থায় ক্লাস করতে হবে না। এর চেয়ে বড় সুখের কিছু নেই।

জানা গেছে, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৮৩টি বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৩৩টি স্কুলে চালু হলো এই কার্যক্রম। শিগগিরই বাকি স্কুলগুলোতে মিড ডে মিল কার্যক্রম শুরু হবে।

অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সোহেল আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রতন চন্দ্র পণ্ডিত, এ প্রকল্পের পরিচালক রুহুল আমিন খান, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির ড. শহীদুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলিখান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *