বাস্তবিক পক্ষে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন হচ্ছে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুপম এক ধর্মগ্রন্থ। মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বিশ্বমানবতার জন্য এক অনবদ্য জীবন ব্যবস্থা, অপূর্ব উপহার।
মানব জীবনের এমন কোনো দিক নেই যে ক্ষেত্রে কুরআনে কারীম দিক নির্দেশনা দেয়নি। দেশ পরিচালনায়, সভ্যসমাজ বিনির্মাণে, ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে, আন্তর্জাতিক জীবনে এবং বিশ্বসভ্যতায়…….
মোটকথা জীবন চলার প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি বাঁকে কুরআনে কারীম যে সুবিন্যস্ত নির্দেশনা দিয়েছে
বিশ্বের অন্যকোনো ইজম বা মতবাদ কিংবা ধর্মগ্রন্থ সে পর্যায়ের অবদান রাখতে পারেনি আর পারবেওনা।
এটাই যথার্থ সত্য ও অনস্বীকার্য বাস্তবতা, কেননা অন্যকোনো ধর্মীয় গ্রন্থ মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা হেফাযতের জিম্মাদারিও আল্লাহ পাক গ্রহণ করেন নি। বরং একমাত্র কুরআনে কারীমের ব্যপারেই সূরা হিজরের ৯ নং আয়াতে তিনি এ ওয়াদা করেছেন।
(নিঃসন্দেহে আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি আর নিঃসন্দেহে আমিই এর হিফাযতকারী)
প্রাক কুরানিক যুগের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, যখন মরুচারী আরবের গোত্রে গোত্রে চলছিলো মারামারি, হানাহানি। যখন সারা দুনিয়ায় বইছিলো অনাচার অবিচার পাপাচার আর ব্যভিচার এর পূঁতিগন্ধময় বিষাক্ত বাতাস, ঠিক সেই মুহূর্তে মহানবী সা. ভূষিত হন নবুওয়াত এর সন্মানে। অবতীর্ণ হয় মহাগ্রন্থ কুরআনে কারীম, পালটে যায় অবিশ্বাস্যভাবে সমস্ত দৃশ্যপট, বদলে যায় বিশ্ব সভ্যতা।
সেই অন্ধকার সভ্যতার কবর রচনা করে কুরআনে কারীম রচনা করে এমন এক আলোকোজ্জ্বল আদর্শ সভ্যতা; যে সভ্যতার অনিবার্য অবদান স্বরূপ মরুচারী হিংস্র বর্বর আরব বেদুইনগুলো পরিণত হয় সোনার মানুষে, দুর্ধর্ষ উমর পরিণত হন আমীরুল মুমিনীন উমর রা., গোলাম উসামা রা. পরিণত হন মহান সিপাহ সালারে, হাবশী ক্রীতদাস বেলাল রা. হন “সায়্যিদুনা বেলাল” ও মুআযযিনে রাসূল সা.।
এমনিভাবে আল-কুরআন জোরালো অবদান রাখে তদানীন্তন রোমন সভ্যতাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিতে, আর এমনই এক শাশ্বত সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে যে সভ্যতায় ছিলনা ধনী দরিদ্রে বৈষম্য, ছিলনা সাদা কালোর কোন ভেদাভেদ।
শুধু কি তাই? না, বরং আল-কুরানই সেই বিশ্ব কাঁপানো পারস্য সভ্যতাকে দুমড়ে মুচড়ে থেঁতলে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে এমনই এক সোনালি সভ্যতা; যেখানে ছিলনা আগুনকে দেবতা বানানোর মত হাস্যকর বালখিল্যতা।
বিদ্রোহী কলমে লিখতে চাই: সেই সিন্ধু ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা যখন কালের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত, হরপ্পা ও ব্যবিলনীয় তথাকথিত সভ্যতা যখন ধ্বংসের শেষ অংকে উপনীত, ঠিক তেমনি মুহূর্তে মহাগ্রন্থ কুরআনে কারীম উপহার দেয় পুরো বিশ্বকে এমনই এক চোখ ধাঁধানো, মন মাতানো সভ্যতা, যার পবিত্র অথচ বাঁধ ভাঙ্গা উত্তাল স্রোতে খড়কুটার মত ভেসে গিয়েছিল সকল ক্লেদাক্ত ও অশ্লীল সভ্যতা।
মূলতঃ কুরআনে পাকের মহান সভ্যতাই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য তথা গোটা দুনিয়াবাসীকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছে আদর্শ সংস্কৃত।
প্রিয় পাঠক!
আজ এই চরম ফিতনা ফ্যাসাদের যুগে আল-কুরআনের অবিনশ্বর, শাশ্বত ও চিরন্তন সভ্যতার পরিবর্তে মানব রচিত, পাশ্চাত্যের নোংরা সভ্যতার প্রচার প্রসার ও বিকাশের জন্য একশ্রেণীর লোক যেন আদানুন খেয়ে নেমেছে।
ওরা আদর্শ কুরানী মক্তবের পরিবর্তে ইংরেজি ভাষার শিশু বিদ্যালয়, মাদরাসা বদলে স্কুল কলেজ স্থাপনের স্বপ্নে বিভোর।
কুরান ওদের ভাল লাগেনা কুরআনের ধারক বাহক আলেম সমাজ হচ্ছেন তাদের চক্ষুশূল! এইসব নীতিভ্রষ্ট, আদর্শচ্যুত ভ্রান্ত চিন্তায় উদভ্রান্ত লোকদের ব্যাপারে আমাদের চোখ কান সর্বদা খোলা রাখতে হবে। ওদের সকল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের ব্যাপারে থাকতে হবে পূর্ণ সজাগ।
বক্তৃতা-বিবৃতি, ওয়াজ-নসিহত, লিখনি, এক কথায় সর্বাত্মকভাবে ওদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। মহাপবিত্র গ্রন্থ, আল্লাহপাকের এই কালামের আলো ঘরে ঘরে পৌঁছানোর জন্য আমাদের জান-মাল সব ওয়াকফ করে দিতে হবে। জীবনের বাজী লাগিয়ে হলেও বাংলাদেশের ৬৮ হাজার আদর্শ নূরানি কুরআনী মক্তব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে তার কুরআনের সাচ্চা খাদেম হিসেবে কবুল করেন। “আমিন”।