বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচন: মেয়র প্রার্থীদের চোখ আ’লীগের দিকে!


বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতি ও সামাজিক অঙ্গণে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ঈদুল ফিতরের আনন্দ আড্ডায় সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মূল উপজীব্য বিষয় হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ করে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী আলোচনায় রয়েছেন। এরমধ্যে নতুন মুখের আশায় দলীয় নেতাকর্মীরা। বিএনপি ও জামায়াত এবারও দলীয় প্রতীকে মেয়র নির্বাচন করছে না। তবে, শেষ পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগ মেয়রের চেয়ার কেড়ে নিতে সর্বোচ্চ কৌশলী ভূমিকা পালনের আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছড়াছড়িতেও ধরাশায়ী হতে পারেন অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী।

তফশীল অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুন বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৭ মে। ইতিমধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী নির্ধারণে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড গত ৫ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, জেলা আওয়ামী লীগ প্রেরিত দলীয় মনোনয়নের তথ্য ফরম সংগ্রহ ও পূরণ করে আগামী রোববার সকাল ১০ টার মধ্যে বিয়ানীবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেয়ার আহ্বান করা হয়েছে। শুক্রবার (০৬ মে) পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী মো. আব্দুল বাসেত ও সাধারণ সম্পাদক মো. এবাদ আহমদ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে, মেয়র প্রার্থী হিসেবে শুক্রবার (০৬ মে) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু। এছাড়া, গতকাল বৃহস্পতিবার দলীয় মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ’৯৪ এর জিএস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুকুুল হক। আগামী দু’একদিনের মধ্যে তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া, এবার নতুন মুখ হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজি আব্দুল হাসিব মনিয়া, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জামাল হোসেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ পাবেল মাহমুদ প্রমুখ। এছাড়া, এবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন মেয়র আব্দুস শুকুর।

দলীয় একাধিক সূত্রমতে, বিয়ানীবাজার পৌরসভায় এবার প্রার্থী বদল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি কোন কারণে বদল না হয়, তাহলে মনোনয়ন চাওয়া তালিকা থেকে কমপক্ষে দু’জন স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তখন নৌকার প্রার্থী ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে দলীয় অনেকের মতে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেশি হওয়াতে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বিয়ানীবাজার পৌরসভায় উন্মুক্ত নির্বাচনের সিদ্ধান্তই হবে সর্বোত্তম। এটি না হলে শেষতক বিরোধী পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করবে। এ বিষয়টি দলের স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতাদেরও রীতিমতো ভাবিয়ে তুলছে।

জানা যায়, বিএনপি ও জামায়াত দলীয় না হলেও স্বতন্ত্রের মোড়কে নির্বাচন করবে। তাদের একাধিক প্রার্থীও পাইপ লাইনে রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন। কোন কারণে তিনি নির্বাচন থেকে ছিঁটকে পড়লে তাঁর ছোটভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য মো. ময়নুল হোসেন নির্বাচন করার আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়া, নির্বাচন করতে পারেন বিগত নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী আবু নাসের পিন্টু, অনলাইন এক্টিভিস্ট শমশের আলম, প্রভাষক আব্দুস সামাদ প্রমুখ।

সূত্রমতে, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারণে প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো: আব্দুস শুকুর ৫ হাজার ৮২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। একই বছরের ২২ মে শপথ নেন এবং পরদিন পৌরসভার দায়িত্বগ্রহণ করেন। এরপর থেকে বিগত প্রায় ৫ বছর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগসহ নানাভাবে তিনি আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *