বেইলি সেতুটিও ভেঙে গেল মাত্র তিন দিনে


মাত্রাতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়কের পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গোজাখালিকান্দা আনসার ক্যাম্প এলাকায় ভেঙে পড়া বক্স-কালভার্টের স্থলে স্থাপন করা হয়েছিল বেইলি সেতু। কিন্তু স্থাপনের তিন দিন পর এই সেতুটিও ভেঙে গেছে। এতে করে দুর্গাপুর উপজেলার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে প্রতি দিন তিন হাজারের বেশি ট্রাক ৩৫ থেকে ৪০ টন করে ভেজা বালু নিয়ে চলাচল করে। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কেউ মানছে না। তাই ভেঙে যাওয়া বক্স কালভার্টের স্থলে বসানো বেইলি সেতুটিও অতিরিক্ত চাপ বহন করতে না পেরে ভেঙে গেছে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে অনবরত মাত্রাতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাক চলতে থাকলে ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত সড়কটিও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্যামগঞ্জ- বিরিশিরি ৩৭ কিলোমিটার সড়কটি ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে প্রশস্তকরণসহ সংস্কার কাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ২৪ ফুট প্রস্থ এ সড়কের ব্যয় হয় ৩১৬ কোটি টাকা। কিন্তু সড়কের পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গোজাখালিকান্দা আনসার ক্যাম্প এলাকায় পুরাতন বক্স কালভার্টটি তখন সংস্কার করা হয়নি। ফলে গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অতিরিক্ত বালুবোঝাই ট্রাক পাড় হতে না হতেই কালভার্টটি ভেঙে যায়। তারপর ওই স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন তিন দিনের চেষ্টায় গত বুধবার রাতে একটি বেইলি সেতু স্থাপন করেন। এতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু তিন দিন যেতে না যেতেই গত শনিবার সকালে বালুবোঝাই ট্রাক পার হওয়ার পর বেইলি সেতুটি ভেঙে যায়। এতে করে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ জায়গাজুড়ে যানজটের সৃষ্টিসহ সড়ক যাতায়াতকারী লোকজনদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলারসহ প্রায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ যাতায়াত করেন। স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করেন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিদিন সহস্রাধিক পর্যটক দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার পাহাড় দেখতে যান। সারা দেশজুড়ে দুর্গাপুরের সোমশ্বেরী নদীর বালুর চাহিদা থাকায় প্রতিদিন দুর্গাপুর থেকে প্রায় তিন হাজারের মতো বালুবাহী ট্রাক-লড়ি সড়কটি দিয়ে চলাচল করে।

বিষয়টি নিয়ে নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী বায়েজিদ বাঙালি বলেন, ‘জামালপুর থেকে বেইলির পাটাতন, ট্রানজিয়াম, ডেকিংসহ প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে বক্স কালভার্টের স্থলে বেইলি সেতু বসানো হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ওজন সইতে না পেরে এটিও ভেঙে যায়। এবার ঢেউটুকোন খেয়াঘাট থেকে বেইলির উপাদান সংগ্রহ করে সংস্কার কাজ চলছে। এতে একটু সময় লাগছে। আশা করা যায়, সোমবারের মধ্যেই যান চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।’