মৌলভীবাজারের বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ধামাই নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি অনেকের ব্যক্তিগত মালিকানা জায়গার ওপর স্থাপনাগুলো ছিল। হঠাৎ করে কোনো নোটিশ ছাড়াই অভিযান চালিয়ে তাদের জায়গার স্থাপনাগুলো ভাঙা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার মানুষ হতবাক।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ধামাই নদীর সদর ইউনিয়নের সোনাতুলা ব্রিজ এলাকা থেকে সুজানগর ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত এই অভিযানে অর্ধশতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন। প্রশাসনের দাবি নদী পাড়ের স্থাপনাগুলো সরকারি জায়গার ওপর ছিল।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই নদী পাড়ের স্থাপনা উচ্ছেদের ঘটনায় এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন নদী খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকাভেটর আটকে রাখেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনাস্থলে যান বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন। এই সময় তারা বিক্ষুব্ধ লোকজনের সাথে কথা বলে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) চাবি সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যবস্থাপকের কাছে বুঝিয়ে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের ধামাই নদীর পাড়ে স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেন। সম্প্রতি ধামাই নদীর খনন কাজ শুরু হয়। এই নদীর পাড়ে রয়েছে দোকান ঘর, শৌচাগার, বাড়ির সীমানাপ্রাচীর, ঘরের একাংশ। নদী পাড়ের ওই স্থাপনাগুলো অবৈধ ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পুলিশ যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় অর্ধশতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ধামাই নদীর সদর ইউনিয়নের সোনাতুলা এলাকার ব্রিজ থেকে সুজানগর ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত অভিযান হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী পাড়ের ভেঙে ফেলা স্থাপনাগুলো পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ভেঙে ফেলা স্থাপনাগুলো জনপ্রতিনিধিদের দেখাচ্ছিলেন। এ সময় অনেক লোকজনকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। কথা হয় এলাকার বাসিন্দা শেলি বেগমের সাথে। অভিযানে ওই নারীর বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কোনো ঘর-বাড়ি ভাঙলে আগে নোটিশ দেয়। কিন্তু কোনো নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে আমার বাড়ির দেওয়াল (সীমানা প্রাচীর) ভাঙা হয়েছে। এটা আমার মালিকানাধীন জায়গায়। কাগজপত্র সব আছে। আমার ক্রয় করা জায়গা থেকে ৩ ফুট ছেড়ে দেওয়াল নির্মাণ করেছি। এরপরও কেন আমার দেওয়াল ভাঙা হয়েছে বুঝতে পারলাম না।
মুদি দোকানি মরতুজ আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার দোকানটি নিজের জায়গায় করেছি। কোনো নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে ভাঙা শুরু হয়। মালামাল সরাতে পারিনি। আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেকের ঘর ভাঙা হয়েছে। মালামাল সরানোর সুযোগও দেওয়া হয়নি। কথা বলতে গেলে গাড়ি চাপা দিয়ে মারার ভয় দেখানো হয়।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগে বলা হয়। তারা সরাননি। রেকর্ডে রাস্তার জায়গায় যতটুকু পড়েছে ততটুকু ভাঙা হয়েছে। উচ্ছেদের সময় মালিকানা জায়গার বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি। পরে শোনেছি লোকজন দাবি করছেন মালিকানা জায়গা ভাঙা হয়েছে।