হাকালুকি হাওরের মৌলভীবাজারের বড়লেখা অংশের বিশাল মৎস্য ভান্ডার খ্যাত প্রায় দেড় হাজার একরের গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালে বাঁধ কেটে মাছ লুটের চেষ্টা পণ্ড করে দিয়েছে প্রশাসন। গত সোম ও মঙ্গলবার কেটে ফেলা বাঁধ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালটি ১৪২২ বাংলা থেকে ১৪২৭ বাংলা সন পর্যন্ত বার্ষিক ৭২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা খাজনায় সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ইজারা দিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় জলমহালটি পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির অনুকূলে ইজারার আদেশ জারি করে। নীতিমালা পরিপন্থী এ ইজারা আদেশের বিরুদ্ধে দরখাস্তকারী সমিতি হাইকোর্টে রীট পিটিশন করে। শুনানী শেষে বিজ্ঞ হাইকোর্ট ইজারা আদেশ বাতিল করে রায় ঘোষণা করেন।
এদিকে নীতিমালা বর্হিভূতভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ১৪২৪ বাংলা থেকে ২৪২৯ বাংলা পর্যন্ত ৫ বছরের জন্য জলমহালটি ইজারা প্রদানের আদেশ জারি করে। নীতিমালা পরিপন্থী এ আদেশের বিরুদ্ধেও সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি সুপ্রীমকোর্টে রীট মামলা দায়ের করেন (রীট নং-১৫৬১/২০১৮)।
অন্যদিকে মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিও সুপ্রীমকোর্টে লিভ টু আপিল মামলা দায়ের করে। সুপ্রীমকোর্ট উভয় মামলা একত্রিত করে বিচারের জন্য হাইকোর্টে প্রেরণ করেন। সম্প্রতি হাইকোর্ট হাওরখাল বদ্ধ জলমহালের ইজারা বাতিল ঘোষণা করেন। আদালতের কোনো ধরনের আদেশ ছাড়াই মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম গত ৩ মাস ধরে বিলের পশ্চিম-উত্তর পাড়ে বাসা তৈরী করে মাছ লুটের চেষ্টা চালান।
অভিযোগ রয়েছে, মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমিতিকে সামনে রেখে ফেঞ্চুগঞ্জের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকার মাছ লুটের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গত শুক্রবার প্রভাবশালীরা হাওরখাল বিলের পশ্চিম-উত্তর পাড়ের বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশন শুরু করে। খবর পেয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত লায়লা নীরা থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে কাটা বাঁধ পুনঃস্থাপন করেন। এসময় থানার ওসি (তদন্ত) মো. জসীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিলের পাড়ে বাসা তৈরী করে রেখেছেন মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম। বাসায় মাছ ধরার জন্য জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম মজুদ করে রেখেছেন। সেখানে ৩০-৪০ জন জেলেকেও রাখা হয়েছে। বিলের একাংশে বাশের খাটি মেরে রেখেছেন। মাছ বিক্রির স্থানও প্রস্তুত করে রেখেছেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম জানান, মাছ ধরার জন্য বিল রক্ষণাবেক্ষনের জন্য বাসা তৈরী করেছেন। পানি কমানোর জন্য বাঁধ কেটেছিলেন। তবে প্রশাসনের নির্দেশে তা মেরামত করে দিচ্ছেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত লায়লা নীরা বলেন, ‘হাওরখাল বিলের ইজারা বাতিল করেছেন আদালত। অবৈধভাবে মাছ আহরণের নানা তৎপরতার খবর পাই। একটি সমিতি বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশন করছিল। দাঁড়িয়ে থেকে কেটে ফেলা বাঁধ পুনঃস্থাপন করিয়েছি। বিল থেকে অবৈধভাবে যাতে মাছ ধরতে না পারে সে জন্য নজরদারী অব্যাহত থাকবে।’