মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে নিম্নমানের রড ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবনের ফাউন্ডেশন বিমের বিভিন্ন কাজে নিম্নমানের রড ব্যবহারে বাধা দেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে ঠিকাদারের লোকজন।
গত বুধবার দুপুরের দিকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সামনে ঘটনাটি ঘটে। নিম্নমানের রড না সরানো এবং কার্যাদেশ ও নকশা মোতাবেক না হওয়ায় কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা নতুন ভবন নির্মাণ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ পায় বড়লেখা উপজেলার আহমদ শরীফ দেলোয়ারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শরীফ এন্টারপ্রাইজ। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জোনের আওতায় কাজটি হচ্ছে। কিন্তু শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনের ফাউন্ডেশন বিমের রড বাঁধাইয়ে ব্যাপক অনিময় করে। ব্যবহার করা হয় নিম্মমানের রড। ফাউন্ডেশন বিমের রিং তিন ইঞ্চি অন্তর অন্তর থাকার কথা। কিন্তু এখানে ৭/৮ ইঞ্চি অন্তর অন্তর রিংগুলো বাঁধা হয়েছে। এসব কাজে বাধা দেন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী। কয়েক দফায় রড পরিবর্তন করতে বলেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে গড়িমসি করেন।
এ অবস্থায় গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) উপ সহকারী প্রকৌশলী আফজাল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখতে পান ভবনের বিমসহ অনেক জায়গায় নিম্নমানের রড রয়েছে। রিং বাঁধাইয়েও অনিয়ম রয়েছে। কোনোটাই ঠিক করা হয়নি। এনিয়ে কথা বললে ঠিকাদারের লোকজন প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা প্রকৌশলীকে উদ্ধার করে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দেখা গেছে, ভবনের বিমসহ বেশ কয়েক জায়গায় নিম্নমানের রড ব্যবহার করা হয়েছে। বিমের একেকটি রিং এর দূরত্ব অনেক। তিনি ইঞ্চি অন্তর অন্তর এগুলো বাঁধার কথা। কিন্তু এগুলো ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি দূরত্বে রয়েছে।
কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত মিস্ত্রি আবু তালেবের সাথে। তিনি বলেন, ‘কিছু নিম্নমানের রড ছিল। এগুলো সরানো হয়েছে। রিংগুলোও ঠিক করা হবে। বাজে আর রড থাকলে পরিবর্তন করা হবে। একটিও থাকবে না। ইঞ্জিনিয়ারের সাথে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে শ্রমিকদের। আমি বাইরে ছিলাম। এ ঘটনায় উনার কাছে শ্রমিকরা ক্ষমা চেয়েছে।’
চান্দ্রগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন, ‘শ্রমিকরা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে খুব বাজে আচরণ করেছে। কাজে অনিয়ম হওয়ায় তিনি বাধা দেন। এরা কাজে কিছু অনিয়ম করছে, আমাদেরও মনে হয়। ইঞ্জিনিয়ার তো আরো ভালোই বুঝতেছেন।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শরীফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আহমদ শরীফ দেলোয়ার শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘ভালো রডের সাথে দুই বান্ডেল রড ভুলে চলে আসছে। শ্রমিকরা এগুলো ভুলে কাজে ব্যবহার করেছিল। এগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) মুঠোফোনে বলেন, ‘তারা ফাউন্ডেশন বিমসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিম্নমানের (ননগ্রেড) রড ব্যবহার করে। কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখতে পাই। এগুলো পরিবর্তন করতে বলি। তিন দফায় বলার পরও ঠিকমত রড বদলানো হয়নি। গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি সাইটে গিয়ে নিম্নমানের রড লাগানো দেখতে পাই। ফাউন্ডেশন বিমের রিং তিন ইঞ্চি অন্তর অন্তর থাকার কথা। কিন্তু সেখানে ৭/৮ ইঞ্চি দূরত্বে রিং বাঁধা পাই। এগুলো কেন বদলানো হয়নি জানতে চাই এবং কাজের গুণগত মান কেন নিশ্চিত হয়নি, এ নিয়ে কথা বলি। এতে ঠিকাদারের শ্রমিকরা রডসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাকে মারতে আসে। খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে। আমাকে ভেতরে রেখে বাইরের গেট বন্ধ করে দেয়। প্রাণে মারার হুমকি দেয়। ঘটনাটি পরিকল্পিত মনে হয়েছে। পরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকরা আমাকে উদ্ধার করেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কাজ বন্ধ রাখতে প্রধান শিক্ষককে বলেছি।’