নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় প্রতিমুহূর্ত গুজব ছড়ানো হয়েছিল ফেসবুকে। ছাত্রছাত্রীদের রাস্তায় নামিয়ে আনতে যা যা করার দরকার ছিল তার সবই করা হয়েছিল সরকারবিরোধীদের পক্ষ থেকে।
গুজব ছড়ানো হল ধানমন্ডিতে কিছু মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে এবং আরও অনেকরে হত্যা করা হয়েছে ইত্যাদি-ইত্যাদি। ফেসবুকে সরকারবিরোধীদের পাশাপাশি গুজবে বিভ্রান্ত শতশত ফেসবুকাররা মুহূর্তে ভাইরাল করলো এই অপপ্রচার। ফেসবুকে বাঁশেরকেল্লা পেইজ আর ছাগু বলে পরিচিত জামায়াত-শিবির তখন একের পর এক গুজব ছড়াচ্ছে, উস্কানিমূলক লেখালেখি ভাইরাল করাচ্ছে। লীগ নামধারী অনেককেই তখন দেখেছি ওসব লেখা শেয়ার এবং কপি-পেস্ট করতে!
অনলাইনের বহুদিনের পরিচিত অনেক মুখ তখন ফেসবুক থেকে উধাও, কোথাও নেই তারা, নীরব হয়ে বসে আছেন অথবা টাইমলাইনে চুপটি মেরে বসে ছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন সড়ক আন্দোলনে সরকারের এই বুঝি পতন হল! ফেসবুকে তখন আমরা মুষ্টিমেয় কিছু লোক এইসব গুজবের বিরুদ্ধে ছিলাম, গুজব প্রতিহত এবং গুজবের বিরুদ্ধে অন্যদের সচেতন করতে গুজব ধরিয়ে দিতে রাতদিন কাজ করেছি।
পদ-পদবিধারী অনেকরেই তখন সড়ক আন্দোলনকারীদের পক্ষে লিখতে দেখেছি ইনিয়ে-বিনিয়ে। সেখানেও গিয়েও আমরা তাদের ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছি, বলেছি এই আন্দোলনের বিপক্ষে আমরা কেউ না। তাদের ধরিয়ে দিয়েছি নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে উঠা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন সরকারবিরোধীদের হাতে। এই আন্দোলন এখন আর নিরাপদ সড়কের জন্য নয়, এই আন্দোলন এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, সরকার পতনের জন্য। আমাদের কথা অনেকেই বিশ্বাস করে লেখালেখি বন্ধ করেছেন এবং আর অনেকেই গুজব প্রতিহতে ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করেছেন।
সেইসব কথা আমাদের অনেকেই কিন্তু গেছেন? ‘একমত’ এবং ‘সহমত ভাইয়েরা’ অনলাইনে, মাঠে কোথাও ছিল না, গর্তে লুকিয়ে ছিল। অথচ এখন ওরা কারো কারো ব্যক্তিগত লোক হওয়ার কল্যাণে সেই একমত এবং সহমত ভাইদের জয়জয়কার!
কিচ্ছু বলার নাই, যে বা যারা কারো ব্যক্তিগত লোক হতে পেরেছে তারাই কাজ না করেও কাজের লোক। মাঠের রাজনীতি না করেও মাঠের ত্যাগী এবং পরিশ্রমী তারা।
ফেসবুকে পথচলা শুরু সেই ২০০৮ সাল থেকে। এই সময়ে কতজনকে দেখেছি দল এবং সরকারের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করতে। মিথ্যাচার, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সেই সময় থেকে কাজ করা ওই লোকগুলো কখনো নিজেদের নির্লজ্জের মতো জাহির করেনি, নীরবে কাজ করে গেছে এবং এখনো যাচ্ছেন। তাই তারা সামনে আসতে পারেনি।
এই সময়ে দেখেছি যারা আমাদের মতন চুনোপুঁটির লেখা কপি-পেস্ট করতো তাদের অনেকেই এখন কী ভাবটাই না নেয়। কিছুদিন আগে নতুন একজনের সাথে দেখা। বয়স ১৮/১৯ হবে, কথার ফাঁকেফাঁকে জানলাম সে সহ আরও কয়েকজন গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের মাসোয়ারা দেয়া হয়। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তা কী কী কাজ করো? উত্তরে যা বললো তাতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে হলো কয়েক পলক। অথচ ওই কাজটাই সেই ২০০৮/৯ সাল থেকে করে আসছে কত সহস্র নাম না জানা ফেসবুকের ভাই-বন্ধু-আপাসহ লীগের শেখ হাসিনা অন্তপ্রাণ নেতাকর্মীরা। কিন্তু তাদেরকে কেউই চেনেনা!
ফেসবুকের খুব কাছের একজন একদিন আমাকে বলেছিলেন; তোমরা যারা সারাক্ষণ কাজ করো, এটা ওটা নিয়ে লেখালেখি করো কিন্তু জেনে রেখো তোমাদের এসব কাজের কোন মূল্যায়ন হবে না, কারণ কি জানো? কারণটা হলো আমাদের নেতারা জানেন এবং বুঝেন, ‘তোমরা হলে শেখ হাসিনা অন্তপ্রাণ, তোমাদের শিরা উপশিরায় বহমান পিতা মুজিবের আদর্শ।’ সুতরাং তোমাদের দলের কোথায় না রাখলেও, কাজের মূল্যায়ন না করলেও তোমরা কেউই যে দলের বিরুদ্ধে যাবেনা এই বিষয়টা আমাদের নেতারা খুব ভালো করেই জানেন, তাই তোমরা অবহেলিত থাকবে।