ভোলাগঞ্জ এলাকায় দিনে দুপুরে লুট হচ্ছে কোটি টাকার পাথর,প্রশাসন নিরব


সাজিদুর রহমান সাজ :: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে প্রতিদিন লুট হচ্ছে কোটি টাকার পাথর। স্থানীয় প্রভাবশালী পাথরখেকো সিন্ডিকেট চক্রের নেতৃত্বে নদী থেকে দিনে কোটি টাকার পাথর লুট হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে,স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতাকে ম্যানেজ করেই চলছে পাথর লুটের এ মহোৎসব। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোম্পানীগঞ্জের বাংকার,লালপাথর,কালাইরাগ এলাকাসহ ধলাই নদী থেকে প্রতিদিন কোটি টাকার পাথর লুট করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে,নদী থেকে এ পাথর লুট নিয়ন্ত্রণ করছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীমের ঘনিষ্ট সহচর হিসাবে পরিচিত আমির উদ্দিন,বিল্লাল ও আমিরুল ইসলাম। নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরাসরি কালাইরাগ এলাকা থেকে প্রতিদিন শতাধিক গাড়ি ট্রাক্টর দিয়ে পাথর লুটপাট করছেন আমির উদ্দিন। তিনি রাতে বোমা মেশিন লাগিয়েও হুমকির মুখেও ফেলে দিয়েছেন সাদাপাথর এলাকা। গভীর গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারণে এবারো এখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা (বাংকার) এলাকায় বিল্লালের নেতৃত্বে ফের পাথর লুটপাটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় একটি পাথরখেকো চক্র।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা নতুন একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সিলেট সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ’ শ’ মানুষ বিনোদনের জন্য বেড়াতে আসেন ওই এলাকায়। কিন্তু প্রভাবশালী পাথরখেকো চক্র ও তাদের লোকজনের পাথর উত্তোলনের ফলে পর্যটন এলাকাও পড়েছে হুমকির মুখে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ক্ষোভের কারণ পাথর লুট করে প্রভাবশালীরা মামলা হয় নিরীহদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় লোকজন জানান, কোম্পানীগঞ্জের বাংকার ও লালপাথর এলাকা ছাড়া অন্য সব এলাকাগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তবুও ধলাই নদীর বুকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের থাবা চলছে। কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগের পাথরখেকো সিন্ডিকেটের মূল হোতা হচ্ছেন আমির উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে পাথর চাপা পড়ে দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনায় পুলিশের হত্যা মামলা। ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঘটেছিলো এ ঘটনা। ওইদিন পাথরখেকো সিন্ডিকেটের মূল হোতা আমির উদ্দিনের মালিকানাধীন গর্তে পড়ে প্রাণ হারান দুই শ্রমিক। তখন আমিন উদ্দিনকে আসামি করে দুই শ্রমিক খুনের ঘটনায় মামলা করে পুলিশ। এ মামলার পর কিছুদিন পলাতক থেকে জামিন নিয়ে ঘটনার দেড় বছরের মাথায় আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আমির। পাথর লুটে বেপরোয়া আমির উদ্দিন এবার ছোবল বসিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগের কাছাকাছি এলাকায়। নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরাসরি কালাইরাগ এলাকা থেকে প্রতিদিন শতাধিক গাড়ি ট্রাক্টর দিয়ে পাথর লুটপাট করছেন আমির উদ্দিন। তিনি রাতে বোমা মেশিন লাগিয়েও হুমকির মুখেও ফেলে দিয়েছেন সাদাপাথর এলাকা। গভীর গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারণে এবারো এখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা (বাংকার) এলাকায় ফের পাথর লুটপাটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় একটি পাথরখেকো চক্র। সেখানে দিনের পাশাপাশি রাতের আঁধারে বোমা মেশিন দিয়ে চলছে অবাধে পাথর লুট। পাথরখেকো চক্র পাথর লুটপাটে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পাথর উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাংকার। বেশ কিছুদিন ধরে রোপওয়ে বাংকারে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বোমা মেশিন দ্বারা পাথর উত্তোলনের কাজ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই চক্রটি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে রফাদফার মাধ্যমে বাংকার এলাকা থেকে পাথর লুটপাট করে রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকার ধ্বংসে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সংরক্ষিত বাংকার এলাকা থেকে বর্তমানে পাথর উত্তোলন করছেন বিল্লালের নেতৃত্বে একটি পাথরখেকো চক্র। তারা বোমা মেশিনের মাধ্যমে সরকারের শত কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস্তুুপে পরিণত করে পাথর উত্তোলন করছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পেশীশক্তির বলে পাথরখেকো চক্রটি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকার ধলাই নদী থেকে কোটি কোটি টাকার পাথর সম্পদ লুটে নিলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মাঝে মধ্যে পাথরখেকো চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে পুলিশ ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও প্রতিবার আমির উদ্দিন ও বিল্লাল রয়ে যান বহাল তবিয়তে। এদের মধ্যে আমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে মামলা হয়েছিলো। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পাথরখেকোদের তালিকা করে যে মামলা দায়ের করে সেখানেও আসামি করা হয়েছে আমির উদ্দিনকে। তবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে আমিরুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে পরাজিত হলে একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। তিনি চ্যালেজ্ঞ ছুরে দিয়ে বলেন, সরাসরি কেউ যদি আমাকে পাথর লুটে জড়িত থাকার প্রমান করতে পারে তা হলে আমি তাকে পুরস্কৃত করব! আপনি সরাসরি না হলে নেপথ্যে পাথর লুট করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর মিলেনি আমিরুল ইসলামের কাছে। আমির উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তার তার ক্রয় করা মালিকানাধীন জমি থেকে পাথর উত্তোলন করছেন। একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি জানান। স্থানীয় বিজিবি কালাইরাগ ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার আবদুল মুবিন বলেন,ধলাই নদীর সীমান্ত ঘেঁষে কোনো পাথর কোয়ারি নেই। বিজিবি নিয়ন্ত্রিণের ভেতরে থাকলে বিজিবি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো। স্থানীয় ১নং ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল এ প্রতিনিধিকে বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন,পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি তাজুল বলেন, রোপওয়ে বাংকার এলাকায় পাথর লুটপাটের বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বিষয়টি খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন।