মনু নদীতে ডুবে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু


মাহফুজ শাকিল : এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে বন্ধুদের সাথে ভ্রমণে এসে আর বাড়িতে ফেরা হলো না স্কুল ছাত্র আব্দুস সালামের। শুক্রবার সকালে বন্ধুদের সাথে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের আড্ডার আনন্দময় মুহুর্তের ছবিগুলো নিহত সালামের এখন কেবল শুধুই স্মৃতি। সে কি জানতো ভ্রমণে এসে না ফেরার দেশে চলে যেতে হবে। হাসপাতালের বারান্দায় সহপাঠীরা তাঁর নিথরদেহ দেখে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন।
মৌলভীবাজারে কুলাউড়ায় সহপাঠীদের সাথে গোসল করতে নেমে মনু নদীতে ডুবে আব্দুস সালাম নামে (১৭) বছরের এক এস.এস.সি পরীক্ষার ফল প্রার্থী শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ২২ মার্চ শুক্রবার দুপুর সাড়ে বারোটায় কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা ব্রীজের দক্ষিণ পার্শ্বে মনু নদীতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুস সালাম নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার জয়নগর ইউনিয়নের আছকি তলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। সালাম শিবপুরের চৈতন্যা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে।
পারিবারিক ও সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে নরসিংদী থেকে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটন এলাকা দেখার জন্য ঘুরতে আসে ১৩ জন বন্ধু (নওশাদ, হিমেল, রিফাত, কাওছার, সোহাগ, ফারুক, মোহাম্মদ, রাতুল, মেহেদী, হাসনাত, ফাহিম ও শুভ) এবং সকলের অভিভাবক হিসেবে তাদের প্রাইভেট শিক্ষক সুলেমান ভূঁইয়াও তাদের সাথে ছিলেন। শুক্রবার সকালে মাধবকুন্ড ভ্রমণ শেষে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর লেকে যাওয়ার পথিমধ্যে কুলাউড়ার কটারকোনা ব্রীজের পার্শ্বে মনু নদীতে সবাই গোসল করতে নামেন। সহপাঠীরা গোসল সেড়ে উপরে উঠে যায়, একপর্যায়ে আব্দুস সালাম তাঁর শরীর ও মাথায় সাবান মেখে পানিতে ডুব দেবার পর সাঁতার না জানাতেই হঠাৎ করেই পানিতে তলিয়ে যায়। ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসী কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে সহপাঠী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় সালামকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু বকর নাসের রাশু তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সহপাঠীদের প্রাইভেট শিক্ষক সুলেমান ভূঁইয়া বলেন, ছাত্রদের আবদারের কারণে তাদের সাথে আমার আসা। মাধবকুন্ড ভ্রমণ শেষে মাধবপুর লেকে যাবার পথে আমরা সবাই মনু নদীতে গোসল করতে নামি। সালাম সাঁতার জানেনা। গোসল করতে নেমে সে হাবু-ডুবু খেয়ে পানির নীচে তলিয়ে যায়।
কুলাউড়া থানার ওসি তদন্ত সঞ্জয় চক্রবর্তী বিকেলে বলেন, নিহত স্কুল ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা থানায় আসার পর উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হবে।
এদিকে সন্তান হারানোর আহাজারিতে সালামের পরিবারে নেমে এসেছে শোক। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত স্কুল ছাত্রের মামা রাসেল আহমদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী লাশ গ্রহণ করতে কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।