বৃহত্তর সিলেটের সাবেক রাজনৈতিক দিকপাল মহান জাতীয় সংসদের আইন প্রনেতা, বারবার নির্বাচিত এমপি ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী স্মরনে দোয়া মাহফিল অনুষ্টিত হয়েছে ।
মিশিগান ষ্টেট যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুর মিয়ার উদ্যোগে ওয়ারেন সিটির বিসমিল্লাহ কাবাব রেষ্টুরেন্টে গতকাল ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার এ স্মরন সভা ও দোয়া মাহফিলটি অনুষ্ঠিত হয় । দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন আল ইসলাহ মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ফখরুল ইসলাম । অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মোঃ নুর মিয়া ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিশিগান মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস শাকুর খান মাখন, মোচ্ছাদ্দেক গাজী ,মিল্লাদ চৌধুরী, মোঃ কদর আলী, কাইয়ুম আহমেদ, আলফু মিয়া, ফখর উদ্দিন, সোয়েব,আবুল কাশেম, সালাম আহমেদ,মনির আহমেদ, রুমান আহমেদ ইভান, জসিম উদ্দিন, তারেক আহমেদ, খাজা আফজল, রিবু চৌধুরী, আওলাদ হোসেন মামুন, এ,জে পাশা, রিপন মিয়া, হোসেইন ইকবাল, ফারহান নির্ঝর, আলামিন মিয়া, হানিফ মিয়া সহ মিশিগানের গণ্যমান্য আরোও অনেকে ।
উপস্তিত অতিথিরা মরহুমের স্মৃতিচারন করে বলেন ‘’মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী এমপি ছিলেন বাংলাদেশের অংহকার ও সিলেটের গর্ব। হবিগঞ্জ ও সিলেটের উন্নয়নে তাঁর ভুমিকা ছিল অনস্বীকার্য । মহান এ নেতাকে আল্লাহ তায়ালা বেহেস্ত নসিব করুন ।“
অনুষ্ঠানে মরহুমের সুযোগ্য পুত্র হবিগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী) এর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করা হয় ।
উল্লেখ্য মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী বৃহত্তর সিলেট বিভাগ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দেওয়ান ফরিদ গাজি ১৯২৪ সালের ১ মার্চ হবিগঞ্জ জেলায় নবীগঞ্জ থানার দেবপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা দেওয়ান মোহাম্মদ হামিদ গাজী ছিলেন দিনারপুর পরগণার জমিদার। ফরিদ গাজী হযরত শাহজালাল মুজাররদ-ই-ইয়েমেনীর (র) সফরসঙ্গী হযরত তাজউদ্দিন কোরেশীর (র) ১৬তম বংশধর।
ফরিদ গাজী ১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং দলের সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি সিলেট জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। ফরিদ গাজী ১৯৬৪ সালে সিলেটের তোপখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের তে অংশগ্রহণের দায়ে ১৯৬৭ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং ১১ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ফরিদ গাজী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে সিলেট সদর আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনকালে ফরিদ গাজী সিলেটে আন্দোলন সংগঠিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রণাঙ্গনে ৪ ও ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা এবং দীর্ঘদিন উত্তর-পূর্ব রণাঙ্গনের আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার পাশাপাশি তিনি শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানেও নিয়োজিত ছিলেন।
দেওয়ান ফরিদ গাজী ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় প্রথমে স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর এবং পরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ফরিদ গাজীর অবদান ছিল অপরিসীম। বিশেষ করে ওয়েজ আর্নার্স স্কিম চালু ছিল তাঁরই চিন্তার ফসল।
ফরিদ গাজী দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ফরিদ গাজী ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে পর পর সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। শেষদিকে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচিত দশম জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন।
দেওয়ান ফরিদ গাজী ২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে সিলেটে হযরত শাহজালালের (র) মাযার সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।