মাকে হারিয়ে গহীন বনে নিরুদ্দেশ সেই হাতি শাবক


কক্সবাজারের ঈদগাঁও’র গহীন অরণ্যে মায়ের নিথর দেহে ছোট্ট শুঁড় দিয়ে মাকে তুলতে চেষ্টা করা সেই হাতি শাবকটি গহীন বনে নিরুদ্দেশ হয়েছে। বছর দেড়েক মায়ের সঙ্গে চলে প্রকৃতি চেনা মাকে তুলতে না পেরে মরদেহের চারপাশে ঘুরছিল শাবকটি। এরপরও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে মায়ের পাশে সেও শুয়ে পড়েছিল। আবার শুঁড় দিয়ে স্পর্শ করছিল মাকে।

এসময় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ছোট্ট হাতি শাবকের চোখের পানি উপস্থিত সবার চোখকে অশ্রুতে ঝাপসা করে দিচ্ছিল। এটি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর প্রকৃতি ও প্রাণীপ্রেমি ছাড়াও সব শ্রেণির মানুষ হাতি শাবকটির পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে জানতে উন্মুখ হয়ে যে যার পরিচিত গণমাধ্যমে ফোন করছেন।

কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও-উত্তর) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ঈদগাঁও’র ফুলছড়ি রেঞ্জের রাজঘাট বিটের জঙ্গল খুটাখালী মৌজার কাইস্যার ঘোনা নামক এলাকায় শনিবার বিকেলে মৃত মা-হাতির সন্ধান পায় বন বিভাগ। খবর পেয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকরা ঘটনাস্থলে যান। ময়নাতদন্তের জন্য হাতির শরীরের ফুসফুস, লাঞ্চসহ শরীরের নানা অংশ নেয়া হয়। সেখানে যা দেখলাম মৃত হাতিটির ফুসফুস ও লাঞ্চে পানি জমেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, কোনো কঠিন রোগে ভুগছিল হাতিটি। তার শরীরে গুলির চিহ্নের মতো আঘাতগুলো গাছের গোড়ালির গুতা হতে পারে। গুলির চিহ্ন ভিন্ন হয়। তার শরীরে ক্ষতের চিহ্নগুলো থেকে জীবাণু অন্য প্রাণীদের গায়ে সংক্রমণ হতে পারে ভেবে রাত ৯টার দিকে তাকে পাওয়া স্থানেই পুঁতে ফেলা হয়েছে।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে থাকাকালীন হাতি শাবককে বাঁশপাতা ও অন্য খাবার দিয়ে দেখেছিলাম। অনায়াসে শাবকটি খাবারগুলো খাচ্ছিল। উপস্থিত চিকিৎসকরা শাবকটি নিজেকে সামলানোর মতো বয়স বহন করছে বলায় তাকে বনেই ফেরাতে চেষ্টা চলে। রাতে লোকজন চলে আসার পর হাতি শাবকটিও বনে চলে যায়। তবে সেখানে বনকর্মী ও স্থানীয়দের নজর রাখতে বলা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, শনিবার দিবাগত শেষ রাতে অন্য হাতির পালের সঙ্গে বাচ্চা শাবকটিও মৃত হাতি পুঁতে ফেলা স্থলে এসে ঘুরে গেছে।

ডিএফও মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হাতি প্রজাতির একটি ধর্ম হলো শাবক যারই হোক বড় হাতির পাল সবাই মিলে শাবকের দেখভাল করে। এটিও সেভাবে রক্ষিত থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এরপরও মাকে পুঁতে ফেলা স্থানসহ আশপাশে নজর রাখতে বলা আছে। যদি শাবকটি সেখানে ফিরে আসে তবে, তাকে ধরে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হলো, প্রকৃতির প্রাণী প্রকৃতিতে থাকা।

ঈদগাঁও’র সমাজকর্মী শাহিদ মোস্তফা জানান, বনকর্মী ও ভিলেজারদের সঙ্গে আমরাও বনের সেই জায়গায় গিয়েছিলাম। বাচ্চা হাতিটির সন্ধান পাওয়া যায়নি।

ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আবু জাকারিয়া জানান, শনিবার স্থানীয়রা দেখতে পান একটি মা-হাতি দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছিল। একসময় হাতিটি শুয়ে পড়ে। প্লটে কাজ করা এক শ্রমিক হাতিটি শুয়ে আছে মনে করে পালিয়ে দূরে অবস্থান করেন। দীর্ঘক্ষণ নড়াচড়া না দেখে স্থানীয় রাজঘাট বিট কর্মকর্তাকে জানান। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাতিটি মৃত বলে নিশ্চিত হন। তার পাশে একটি হাতি শাবক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্ম দেয়, যা ইতোমধ্যে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বময় হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের ফোন করে অনেকে সর্বশেষ বিষয়টি জানতে চাচ্ছেন।