যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা নিজেদের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে এগিয়ে চলছেন। বহু জাতিগোষ্ঠীর অভিবাসনের রাজ্য মিশিগানে বাংলাদেশিরা একের পর এক সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন। রাজনীতি, সমাজ সংস্কৃতিতে বাংলাদেশিদের এমন এগিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রকেই সমৃদ্ধ করছে। চলমান মহামারি এবং মহামারি পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করে দূর দেশে নিজেদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মিশিগানে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। ১ আগস্ট রাজ্যের ওয়ারেন সিটিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ওয়ারেন, হ্যামট্রামাক ও ডেট্রয়েট নগরীতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগরীর মেয়রসহ আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী, কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও জনসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
বিসমিল্লাহ পার্টি হলে আয়োজিত এই সুধী সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলা সংবাদমাধ্যম হিসেবে মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে আস্থায় রাখেন। তাঁদের নিত্যদিনের কর্ম কোলাহলের চালচিত্র আরও বেশি করে প্রকাশ করার জন্য তাঁরা আহ্বান জানিয়েছেন। হ্যামট্রামাক সিটি মেয়র কারেন মেজেস্কি তাঁর নগরীতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশি লোকজনের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মেয়র মেজেস্কি সিটিতে মাইকে আজান দেওয়ার সুবিধা, বাংলাদেশের নামে সড়কের নামকরণসহ নানা বিষয়ে তাঁর উদ্যোগের কথা জানান। মিশিগানের দেয়ালে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন নিয়ে ম্যুরাল স্থাপনের কাজে জড়িত ছিলেন বিল মেয়র। তিনি সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশিদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের এমন উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পেরে গর্বিত বলে উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসক ও গবেষক দেবাশীষ মৃধা বলেন, জনসমাজের জন্য কাজ করাই তাঁর লক্ষ্য। বাংলা ভাষীদের জন্য লাইব্রেরিতে বাংলা বই রাখাসহ ইংরেজি ভাষায় নিজের প্রকাশনার কথা জানালেন এ শিক্ষাবিদ। তিনি উপস্থিত সুধীজনদের ‘মহামারি করোনা: ডেটলাইন নিউইয়র্ক’ ও ইংরেজি ভাষায় লেখা নিজের একটি বইও উপহার দেন। ইব্রাহীম চৌধুরীর লেখা ‘মহামারি করোনা: ডেটলাইন নিউইয়র্ক’ বইটি নিউইয়র্কে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুর দিকের তাণ্ডবের সংবাদ প্রবাহ নিয়ে লেখা। বইটি হ্যামট্রামাক সিটির লাইব্রেরির জন্য গ্রহণ করেন নগরীর মেয়র কারেন মেজেস্কি।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৩ সালে সাহাব আহমদ হ্যামট্রামাক সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন। শাহাব আহমেদ বলেন, ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত বাংলাদেশি হিসেবে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটসের পক্ষ থেকে তৎকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের আমন্ত্রণে হোম টাউন ডিপ্লোম্যাট হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। ওই সময় আমেরিকান সেন্টার আয়োজিত তাঁর জন্মভূমি সিলেটসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা করেন, যা বাংলাদেশে প্রথম আলো পত্রিকা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
বিজ্ঞাপন
হ্যামট্রামাক সিটির আসন্ন নির্বাচনে একমাত্র বাংলাদেশি মেয়র প্রার্থী কামাল রহমান বলেন, নগরীর শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসেবে বাংলাদেশিদের অগ্রযাত্রা নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন। মেয়র পদে নির্বাচিত করার মধ্য দিয়ে নগরপিতা হিসেবে একজন স্বদেশির পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান।
হ্যামট্রামাক সিটির বর্তমান কাউন্সিলর কামরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশিরা দূরের দেশেও নিজেদের কর্মের স্বাক্ষর রাখছে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—নাঈম চৌধুরী, খাজা শাহাব আহমেদ, মুহিত মাহমুদ, আরমানী আসাদ, আবু মুসা, সৈয়দ শাহেদ হক, হেলাল উদ্দিন, পার্থ দেব, লায়েস উদ্দিন, ফয়সল ইসলাম, গোলাম হেলাল, নাজেল হুদা, আকিকুল হক, শাহীন নাজমুল হাসান, ফয়সাল আহমেদ, হেলাল খান, ইকবাল ফেরদৌস, কামরুজ্জামান হেলাল, মোশাহেদ আহমেদ চৌধুরী, আশিক রহমান, তোফায়েল রেজা, শাহেল আহমেদ, শফিক রহমান, কামাল এম মুস্তফা, জাহানারা তরফদার, তানিয়া চৌধুরী, শামীম আহসান, মুরাদ চৌধুরী, শাহীন চৌধুরী, জাকির আহমেদ, বকুল তালুকদার, আজরা চৌধুরী, বিপ্লব রহমান, ফজলে তরফদার, জাবেদ চৌধুরী, মুজিব আহমেদ প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারির সময়ে তথ্য সম্প্রচারে অনন্য ভূমিকা রাখার জন্য সাংবাদিক ফারজানা চৌধুরী ও ইকবাল ফেরদৌসসহ কয়েকজন বাংলা সংবাদমাধ্যম কর্মীকে নগরীর পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করেন হ্যামট্রামাক সিটি মেয়র কারেন মেজেস্কি।
প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরীসহ লেখক ও সাংবাদিক রহমান মাহবুব, মনজুরুল হক, শেলী জামান খান, আবদুল মালিক জুয়েল ও ভায়লা সালিনা গত সপ্তাহান্তে মিশিগান সফর করেন। তাঁরা মিশিগানে বাংলাদেশি জনসমাজের সঙ্গে একাধিক সভায় মহামারির চলমান সময়ে নানা সংকট ও করণীয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।