মুরগিছানা বাঁচাতে টাকা নিয়ে হাসপাতালে ছুটল শিশু


আন্তর্জাতিক ডেস্ক ::  যেখানে রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ মানুষকে সাহায্য না করে পাশ কাটিয়ে চলে যান অনেকেই, যেখানে গাড়ির ধাক্কায় ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোর মৃত্যুর পরেও নির্লিপ্ত থাকে লোকজন, সেখানে এক শিশুর মানবিকতা এবং সরল মন ছুঁয়ে গেল সবাইকে। দুর্ঘটনায় মৃত একটি মুরগিছানাকে বাঁচানোর জন্য যেভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে শিশুটি, তা অবাক করার মতোই।

ওই শিশুটির বয়স মাত্র ৬ বছর। ভারতের মিজোরামের সাইরাঙের বাসিন্দা ওই শিশুর নাম ডেরেক সি লালছানহিমা। সে বাইসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় অসাবধানতাবশত একটি মুরগিছানার উপর দিয়ে চলে যায় তার সাইকেল। তখনই সাইকেলের চাকায় পিষে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ওই মুরগিছানা।

একটা সামান্য মুরগির ছানার প্রাণ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন সচরাচর কাউকেই হতে দেখা যায় না। ডেরেক কিন্তু তেমনটা হতে পারেনি। বিষয়টাকে পাত্তা না দিয়ে সাইকেল নিয়ে চলে যেতে পারেনি সে। বরং সাইকেল থেকে নেমে তৎক্ষণাৎ মুরগি ছানাটাকে হাতে তুলে নেয় সে। মুরগি ছানাটা নড়াচড়া করছিল না। মারা গিয়েছিল। কিন্তু ডেরেক সেটা বুঝতে পারেনি। কী করবে প্রথমে বুঝে উঠতে পারছিল না সে। তাই ছানাটাকে নিয়ে বাড়িতেই ফিরে আসে।

মুরগিছানাটা যে আর বেঁচে নেই সেটা অবশ্য প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিলেন ডেরেকের বাবা। কিন্তু ছেলের এই চেষ্টায় তিনি বাধা দিতে চাননি। তার পরামর্শেই ডেরেক বাড়ির কাছেই একটি হাসপাতালে মুরগিছানাটাকে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। সঙ্গে নিতে ভোলেনি তার সঞ্চয়ের ১০ টাকা।

এক হাতে মুরগিছানা আর এক হাতে ১০ টাকা নিয়ে সে হাসপাতালে ঢুকে এক নার্সকে সবকিছু খুলে বলে। নার্সের মন ছুঁয়ে যায় ডেরেকের সরলতায়। এক হাতে ১০ টাকা এবং অন্য হাতে মুরগিছানা নিয়ে ছবিটা ওই নার্সই তুলেছিলেন। সেটাই এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল। নার্সের তোলা ওই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ডেরেকের প্রতিবেশী সাংমা।

এখানেই অবশ্য শেষ নয়। হাল ছাড়তে নারাজ ডেরেক। কেউই চিকিৎসা করছেন না দেখে, কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে ডেরেক। তারপর বাবার কাছে আবদার করে একটি ১০০ টাকার নোট নিয়ে ফের হাসপাতালের দিকে রওনা দেয় সে। মুরগিছানাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা নাছোড়বান্দা ছেলেকে এবার একপ্রকার বাধ্য হয়েই ডেরেকের বাবা সত্যিটা বলে দেন। তার কথায় ডেরেক বুঝতে পারে যে, মুরগীছানাটি আর বেঁচে নেই।

ফেসবুকের পোস্ট হওয়া এই ঘটনা সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। একজন লিখেছেন, ‘তার খাঁটি এবং সৎ হৃদয়ের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ ঝরে পড়ুক।’ কেউ তার মধ্যেই ঈশ্বরকে দেখেছেন আবার কেউ লিখেছেন, ‘আমাদের সকলেরই ওর থেকে শেখা উচিত।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *