মুহররম ও আশুরায় মুসলমানের করণীয়

banglashangbad

আরবি (হিজরি) সালের প্রথম মাস মুহররম। এ মাসের ১০ তারিখের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। এ মাসের করণীয় কী হবে? কী করতে হবে? তাও সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ইনতিকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম কারবালার প্রান্তরে ঘটেছে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। যে ঘটনায় সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর হৃদয় থেকে আজও রক্ত ঝরছে। সেদিন ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত বরণ করেন।

হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এ শাহাদাতের ঘটনা অনেক বড় মর্যাদার। আর এতে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বড় শিক্ষা, প্রেরণা ও পরীক্ষা।

অনেকে মনে করেন, ইসলাম অপূর্ণাঙ্গ ছিল, আর তার পূর্ণতা এসেছে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পবিত্র শাহাদাতের মাধ্যমে। যদি বিষয়টিকে এমন মনে করা হয় তবে তা হবে মারাত্মক ভুল কথা।

কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতেকালের আগে ইসলামি শরিয়ত পরিপূর্ণ হয়েছে। যা কেয়ামত পর্যন্তই সংরক্ষিত থাকবে। এতে সংযোগ-বিয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।

সুতরাং এমন বিশ্বাস থেকে মুক্ত থাকতে হবে যে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইনতিকালের পরে সংঘটিত কোনো মুসিবত বা আনন্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো দিন বা কোনো মাসের নতুন কোনো ফজিলত বা নতুন কোনো বিধান আবিষ্কার করা যাবে না। যদি কেউ এমনটি করে তবে তা হবে সুস্পষ্ট গোমরাহী। যার পরিণাম জাহান্নাম।

বরং ইসলামের জন্য ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ আত্মত্যাগ আমাদের জন্য ইসলাম রক্ষায় প্রেরণা ও শিক্ষা। ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেঁচে থাকাও অনেক বড় অনুপ্রেরণা ও পরীক্ষা।

আশুরার দিনের স্মরণে ইসলাম বিধান পালন ও বাস্তবায়নই ঈমানের একনিষ্ঠ একান্ত দাবি। পাশাপাশি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত ইবাদত- রোজা, তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়ার মাধ্যমে এ দিনের ফজিলত লাভ করা। যে ফজিলত ও মর্যাদার কথা তিনি হাদিসে বর্ণনা করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তবে মুহররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেন। ভবিষ্যতেও আরও অনেক মানুষের তাওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)

হাদিসে ঘোষিত এ বিশেষ দিনটিকে ইসলামি চিন্তাবিদগণ ১০ মুহররমের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সে আলোকে আশুরার দিন রোজা পালন যেমন অনেক বড় ফজিলতপূর্ণ তেমনি মুহররম আল্লাহর মাস হিসেবে অনেব বড় মর্যাদার মাস।

আর মর্যাদার মাসে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইসতেগফার করা অনেক উত্তম ইবাদত। তাইতো হাদিসে রোজা পালন করার পাশাপাশি তাওবা-ইসতেগফারের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

মুমিন মুসলমানের উচিত আশুরার দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার রোজা পালন করা। মুহররম মাসব্যাপী তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়া পড়া। যে দোয়া ও ইসতেগফার বেশি পড়া জরুরি তা তুলে ধরা হলো-

اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালঅমাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।’ (আল-মুঝাম আল আওসাত)

বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করবে-
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ
উচ্চারণ : রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’

> সব সময় ইসতেগফার পড়া-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।

আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া-
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। মুহররম মাসব্যাপী ক্ষমা প্রার্থনায় বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি অন্যায় রুসুম রেওয়াজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *