মৃত আমেরিকানদের নামে করোনা-রিলিফের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের চেক


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, করোনা ভাইরাসের তান্ডবে লকডাউনে থাকা আমেরিকানদের জন্যে ফেডারেল তহবিল থেকে মাথাপিছু ১২০০ ডলারের যে চেক ইস্যু করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত: ১.৪ বিলিয়ন ডলারের চেক ছিল মৃত ব্যক্তিদের নামে। অর্থাৎ ২০১৮ অথবা ২০১৯ সালের আয়-ব্যয়ের ট্যাক্স রিটার্নকারিদের মধ্যে করোনা স্টিমুলাস প্রোগ্রামের চেক ইস্যু করা হয়। এরফলে ট্যাক্স প্রদানের পর যারা মারা গেছেন, তাদের নামেও চেক ইস্যু হয়েছে। ফেডারেল প্রশাসনের ‘দ্য একাউন্টেবিলিটি অফিস’র পক্ষ থেকে বিস্তারিত পর্যালোচনার পর ২৫ জুন বৃহস্পতিবার উদ্বেগজনক এ তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এই সংস্থার পর্যালোচনা-প্রতিবেদনে আরো মন্তব্য করা হয়েছে যে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে সাধারণ মানুষের মতো গোটা প্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা এবং হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরী হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বেকার হওয়া লোকজনের কাছে সরাসরি চেক পাঠাতে গিয়ে এমন বিভ্রাট হয়েছে বলে সর্বপ্রথম প্রশ্নের উদ্রেক করেছিল আইআরএস (ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট)।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে বেকার লোকজনকে অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্যে কংগ্রেসে যখন ‘কেয়ারস এ্যাক্ট’র খসড়া করা হচ্ছিল, তখোনই আইআরএস’র অধীনস্থ একটি সংস্থা প্রশ্নের উদ্রেক করে যে, মার্চ পর্যন্ত অনেক আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে। এমন তথ্য তারা অর্থ মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করে। কিন্তু তার আগেই অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমসহ হোয়াইট হাউজে জানানো হয় যে, কেয়ারস এ্যাক্টের আওতায় মঞ্জুরীকৃত অর্থের দ্রুত ছাড় দিতে হবে।

যতদ্রুত সম্ভব তা পৌঁছাতে হবে আর্থিকভাবে হতাশায় পড়া লোকজনের কাছে। এমন অঙ্গিকার শতভাগ পূরণের অভিপ্রায়ে ২০০৮ সালের মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রণালয় এবং আইআরএস যেভাবে কাজ করেছে, সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সে সময়ে মৃত ব্যক্তিদের কাছে ফেডারেল সরকারের কোন অর্থ সহায়তা যায়নি বলেও যুক্তি দেখান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

করোনা স্টিমুলাস প্রোগ্রামের আওতায় ১৬০ মিলিয়ন তথা ১৬ কোটি আমেরিকানের নামে ২৬৯.৩ বিলিয়ন ডলারের চেক ইস্যু করা হয়েছে বলে গভর্নমেন্ট একাউন্টেবিলিটি অফিস জানায়। এই সংস্থার পক্ষ থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে, ইস্যুকৃত চেকের সিংহভাগই ফেরৎ আসেনি কিংবা সরাসরি ব্যাংক একাউন্টেও জমা হয়েছে। একাউন্ট হোল্ডার মারা গেলে সেই চেক ব্যাংকে জমা হবার কথা নয় কিংবা মৃত ব্যক্তির নামে ডাকযোগে চেক পাঠানো হলে সেগুলোও ফেরৎ আসার কথা। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আইআরএস এবং অর্থ মন্ত্রণালয় চেষ্টা করছে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের জন্যে। গভর্নমেন্ট একাউন্টেবিলিটি অফিসের তথ্য অনুযায়ী ফেডারেল প্রশাসন যদি সতর্ক না হয়, তাহলে নিকট ভবিষ্যতে স্টিমুলাস প্রোগ্রামের চেকও প্রতারকদের হাতে যেতে পারে।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিরাজিত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার স্বার্থে ফেডারেল প্রশাসনের আন্তরিকতার বিকল্প নেই বলে সমালোচকরা শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। মাসের পর মাস বেকার থাকায় সিংহভাগ আমেরিকানই নাজুক পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়েছেন। করোনাভাইরাসের তান্ডব অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় আমেরিকানদের কাছে চিকিৎসা-সেবা এবং অর্থ সহায়তা পৌঁছাতে কোনধরনের কালক্ষেপণের অবকাশ থাকতে পারে না বলে কংগ্রেসে বিরোধী দলীয় নেতারা উল্লেখ করেছেন। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতাসীনদের দায়িত্ব অপরিসীম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অসংলগ্ন মন্তব্য সর্বস্তরে প্রকৃত পরিস্থিতি অনুধাবনের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পথ জটিল হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলসী। করোনাপরিস্থিতি মোকাবেলায় এ যাবত ফেডারেল প্রশাসন কত ডলার কীভাবে ব্যয় করেছে তার বিবরণী এখন পর্যন্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষ সমীপে পেশ করা হয়নি।

অপর একটি সূত্রে বলা হয়েছে, করোনায় বিপর্যস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীগণকে ঘুরে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে ৫১২ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ-কর্মসূচিতে দরখাস্ত আহবান করা হয়েছে। তবে এই কর্মসূচিতেও যে প্রতারণা ও ধাপ্পাবাজির ঘটনা ঘটবে না অর্থাৎ অব্যবসায়ীরা যে নামাত্র সূত্রে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের এই অর্থ নিয়ে তা আত্মসাৎ করবে না-সে ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত  গৃহিত হয়নি বলে গভর্নমেন্ট একাউন্টেবিলিটি অফিস জানায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *