জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ‘আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল-২০১৯’ কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির আনা জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
গত ২৫ জুন বহুল আলোচিত দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ আরেক দফা বাড়াতে সংসদে বিল উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান (কামাল)। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। সোমবার সংসদে স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট পেশ করা হয়। ওই বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব উত্থাপনকালে বিরোধী দলীয় সদস্যরা বলেন, বিরোধী দলকে হয়রানি করার জন্য এ ধরণের বিলটি আনা হয়েছে। দেশে সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা দেশের এতো উন্নয়ন ও অগ্রগতি ম্লান করে দিচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়, নীতি-নৈতিকতার অভাব ও স্মার্টফোনের অবাধ ব্যবহার এ ধরণের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে ২০০২ সালে এই আইনটি আনা হয়েছে। তখন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, বাড়ি-ঘরে হামলা করা হলেও ওই আইনে বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতার নামে মামলা হয়নি। সব হয়েছে আওয়ামী লীগের নামে। আর তাদের আমলে বোমা মেরে বিচারককে হত্যা, সারাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। আইনটি শুধুমাত্র সময় বাড়ানো হচ্ছে, কোনকিছু পরিবর্তন করা হয়নি। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতার কারণে ধ্বংসের মামলা হয়েছে, এই আইনে মামলাও হয়নি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে এই আইনে মামলা হলেও তিনি রক্ষা পেয়েছেন। এ আইনকে বিএনপিই অপব্যবহার করেছিল ক্ষমতায় থাকতে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে জোরপূর্বক বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২ জারি করা হয়েছিল। আইনটি করার সময় প্রথমে মেয়াদ দুই বছর করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ৬ বারে এর মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়।