মোদির নিরাপত্তায় দিনে ব্যয় প্রায় ২ কোটি


গত বছর ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সংসদে আইন সংশোধন করে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) নিরাপত্তা তুলে দেয়। দেশটিতে এখন এসপিজি নিরাপত্তা পান শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে তার সেই এসপজি নিরাপত্তার ব্যয় দিনে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো।

ভারতের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আজ বুধবার দেশটির সংসদে সরকারিভাবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যয়ের হিসাব দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, মোদির এসপিজি নিরাপত্তার জন্য প্রতিদিন দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ হচ্ছে ১ কোটি ৬২ লাখ রুপি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২ কোটি টাকার সমান।

ভারতের এসপিজি নিরাপত্তা চারজন থেকে কমে একজনে আসলেও গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের পেশকৃত বাজেটে এসপিজি নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ প্রায় ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরে চারজনের এসপিজি নিরাপত্তায় ৫৪০ কোটি রুপি বরাদ্দ থাকলেও এবার মোদির একার জন্য সেই বরাদ্দ ৫৯২ কোটির বেশি।

সংসদে এ নিয়ে পশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলো। বুধবার লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে আঞ্চলিক দল ডিএমকের এক সাংসদ জানতে চান, আইন সংশোধনের পর বর্তমানে কতজন এসপিজি নিরাপত্তা পান এবং সিআরপিএফ কত জনকে নিরাপত্তা দেয়। আর এসব ব্যক্তি কারা—সরকারের কাছে তারও উত্তর চান তিনি।

লিখিত জবাবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি জানান, দেশে এখন এসপিজি নিরাপত্তা পান শুধু একজন। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম উচ্চারণ করেননি। এছাড়া সিআরপিএফ-এর নিরাপত্তা পাওয়া ভিআইপির সংখ্যা ৫৬ জন। তবে নিরাপত্তার কারণেই তাদের কারো নাম জানানো সম্ভব নয় বলেও জানান মন্ত্রী।

বিরোধীদের প্রশ্ন, এসপিজির নিরাপত্তা পাওয়া ব্যক্তি চার থেকে কমে এক হয়েছে, সেই হিসাবে বরাদ্দ এক চতুর্থাংশ না হলেও অনেক কম হওয়া উচিত। তা না করে উল্টো ১০ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানো হলো। ২০১৯ সালের বাজেটে বরাদ্দ হিসাব করলে মাথাপিছু খরচ ১৩৫ কোটি। সেই হিসাবে মোদির নিরাপত্তায় বরাদ্দ বেড়েছে ৩৪০ শতাংশ।

১৯৮৪ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার পর বিশেষ কমান্ডো বাহিনী নিয়ে গঠিত হয় এসপিজি। ভারতের অভিজাত এই বাহিনীর ওপর প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার দায়িত্ব বর্তায়। ফলে রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী এবং তাদের দুই সন্তান রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এসপিজি নিরাপত্তার আওতায় আসেন।

কিন্তু ১৯৮৯ সালে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীর গান্ধী পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর ১৯৯১ সালে খুন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। একই বছর ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও ফের গান্ধী পরিবারের সদস্যদের এসপিজি নিরাপত্তার চালু করেন।

এরপর গত বছর সেই আইন সংশোধন করে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। সংশোধিত নতুন আইনে শুধু ভারতের প্রধানমন্ত্রীই এসপিজি নিরাপত্তা পাবেন। তারপর গান্ধী পরিবারের এসপিজি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *