গত বছরের বন্যার তিক্ত অভিজ্ঞতার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে লক্ষ্যে এবার ব্যাপক বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ৷
মৌলভীবাজার জেলায় চার উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের আগাম বন্যা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি (পূর্বের ভাঙা ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান) স্থান মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া বাঁধের আরো ৩৬টির অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের কাজ চলছে যা এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৷ এছাড়া বন্যা থেকে মৌলভীবাজার শহর বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে আরসিসি ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের (২০১৮) জুন মাসে মৌলভীবাজারে যে ভয়াবহ বন্যা হয় তাতে শহর ও গ্রামে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা মোকাবিলায় জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মনু ও ধলাই নদীর মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙ্গা স্থানগুলো মেরামতের আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ চারটি উপজেলার ৪৯টি স্থানে এ কাজ চলছে। মোট ৭ হাজার ২৪৭ মিটার এলাকার মেরামত ও বিকল্প বাঁধের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
মনু নদীর রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের কোনাগাঁও (খেয়াঘাট), আদিনাবাদ, উজিরপুর, কান্দিরকুল, মনসুরনগর ইউনিয়নের প্রেমনগর, কামারচাক ইউনিয়নের কালাইকোনা, চাটিকোনাগাঁও, কোনাগাঁও, টুপিরমহল, মিটিপুর, দম্ভিদারেরচক, উত্তরভাগ ইউনিয়নের সিফেজ বন্ধকরণের ৪টি স্থান, কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া, সান্দ্রাবাজ, হাজীপুর, চানপুর, আশ্রয়গ্রাম, জামালপুর, দুন্ধালপুর, খন্দকারগ্রাম, হাজীপুর ইউনিয়নের মন্দিরা, উত্তরভাগ, রণচাপ, ইসমাইলপুর, ছৈদলবাজার, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের আলীনগর, ধলিয়া, কালিরকোনা, শরীফপুর ইউনিয়নের কালারায়ের চর, লালারচক, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশিন্তপুর, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের উত্তর শ্যামেরকোনা, শ্যামেরকোনা, মাতারকাপন, আখাইলকুড়া ইউনিয়নের মীরপুর, ঢেউপাশা, মমরুজপুর,এ স্থানগুলোতে চলছে মেরামত ও বিকল্প বাঁধ নির্মাণের কাজ ৷
এছাড়া ধলাই নদীর কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে বন্যা মোকাবিলা সীমান্ত পিলার, কুরমাঘাট, মাধবপুর ইউনিয়নের হিরামতি, শুকুরউল্যা, অকতিয়ারখোলা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ধাতাইলগাঁও এবং উবাহাটায় ও কাজ চলছে।
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকা থেকে মসজিদ পর্যন্ত ১২৭ মিটার এলাকা ৷ সেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ। এজন্য অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেট থেকে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘নদীর পানি বাড়লে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি স্থান ভেঙে যেতে পারে। তাই আপদকালীন বরাদ্দ থেকে এই স্থানগুলো মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া মনু নদী প্রবাহিত শহরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চাঁদনীঘাট এলাকাটিতে অনুন্নয়ন রাজস্ব বাজেট থেকে জরুরি ভিত্তিতে আরসিসি ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। বন্যা থেকে মৌলভীবাজার শহর বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে আরসিসি ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই এ কাজ শেষ হবে।’