মৌলভীবাজার পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম নানা সমস্যায় : জর্জরিত জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কার্যক্রম


সাকের আহমদ :: প্রায় ২০লক্ষ মানুষের বসবাস ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার জেলা। এই জনসংখ্যার বড় একটি অংশ পরিবার পরিবকল্পনার সেবার আওতার বাইরে। জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় খুড়িয়ে চলছে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালায় সুত্রে জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও মৌলভীবাজার জেলায় ৬৭টি ইউনিয়নের বিপরীতে ৪৩ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র আছে। এই ৪৩ টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৩টি কেন্দ্র সেবা দেওয়ার জন্য উপযোগী বাকী ৩০টি কেন্দ্র জরাজীর্ণ অবস্থায় সেবার অনুপযোগী হয়ে আছে। রয়েছে জনবল সংকট।সরজমিনে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাদঁনীঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ মুলাইম গ্রামে কথা হয় কয়েজন নারীর সাথে। তাদের একজন আরিফা বেগম জানান তার সদ্য একটি বাচ্চার জন্ম হয়েছে। ঔষধ পুষ্টিসহ অন্যান্য সেবা না পেলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।
অন্যদিকে একই এলাকার শাপলা বেগম (২৪) এবং ৪ সন্তানের জননী রিমা বেগম (২৮)জানালেন তারা নিম্ন আয়ের হওয়ায় পুষ্টিকর খাবারসহ বাচ্চা জন্মদান পূর্ববতী এবং পরবর্তী সময়ে কোন পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালায় থেকে কোন সহযোগীতা পাননি।স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহমুদ আলী জানান, পরিবার পরিকলম্পনার মাঠকর্মীরা সময়ে সময়ে তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ কেন বাদ যাচ্ছে তা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বলতে পারবে কারণ ইউনিয়ন অফিসে এ নিয়ে আলাদা কোন বারদ্ধ আসেনা।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের তথ্যমতে মৌলভীবাজার জেলায় ৩৫% পদ খালি থাকায় কোন কোন ইউনিটে একজনকে ৫ জনের কাজও করতে হচ্ছে। সাধারনত ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একজন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও বেশ কিছু ইউনিয়ন আছে যেখানে মাত্র ১ জন মাঠকর্মী ইউনিয়নের ২০থেকে ২৫হাজার মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর একটি জনবহুল ইউনিয়ন এখানে ৫জন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১জন। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নে ৬জন মাঠকর্মী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২জন মাঠকমী। কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে ৩জন মাঠকমী থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১জন। এই চিত্র মোটামোটি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নেরই। এখানে শুধু জনবল সংকট নয় আছে ঔষধের সংকট। ১০দিনের ঔষধ দিয়ে চলতে হয় ১মাস। প্রতিমাসের জন্য যে ঔষধ জেলাতে দেওয়া হয় তা সঠিক ভাবে বন্টন করলে ১০দিন চালানো যাবেনা তাই বাধ্য হয়ে এই ঔষধ দিয়ে ১মাস চালাতে হয়। এতে অনেক এন্টিবায়েটিক ঔষধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৭টার কোর্সের বেলায় ২/৩ টা দিয়ে শেষ করতে হচ্ছে। এন্টিবায়েটিকের কোর্স শেষ করতে না পারা ভবিষ্যতের জন্য বড় স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। মেডিসিন বিষেজ্ঞ ডা: আব্দুল্লাহ আল মারুফ জানান এন্টিবায়েটিকের কোর্স শেষ না করলে ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। যে সমস্যার কারনে এন্টিবায়েটিক খাওয়া হয়েছে সেটা ভবিষত্যতে যেমন আরও বড় হবে তেমিন এই ঔষধ আর কাজ করবেনা। পরিবার পরিকল্পনার এই অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে পরিসংখ্যানেও সিআইপিআরবি এর জেলা সমন্নয়কারী আলতাফুর রহমান জানান, ২০১৮সালে মৌলভীবাজার জেলায় ৭১টি মাতৃ মৃত্যুও ঘটনা ঘটেছে। মৌলভীবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান,ভবন এবং জনবল সংকটে পযাপ্ত সেবা দেওয়া যাচ্ছেনা তবে এলাকার মানুষ অন্যন্য এলাকা থেকে গোড়ামী মুক্ত এবং সচেতন হওয়াতে আমাদের কাজ সহজ হচ্ছে। নয়তো জনবল সংকট,মেডিসিন, ভবন সংকটের কারণে তা সম্ভব হত না। আশাকরছি নতুন নিয়োগ হলে শুণ্যপদে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে এবং সমস্যার সমাধান হবে।