যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ধর্ষক মজনুকে


কুর্মিটোলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় র‌্যাবের সবগুলো ব্যাটালিয়ন কাজ করে ধর্ষক মজনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন-কাশেম। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ক্লুলেস ঘটনা ছিল। কোন সিসি টিভি ফুটেজ ছিল না, কোন তথ্য ছিল না। শুধুমাত্র কিছু বর্ণনার সূত্র ধরে কাজটি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া যুবক মজনুর গ্রামের নোয়াখালীর হাতিয়ায়। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর আগে ঢাকায় আসেন জীবিকা নির্বাহের জন্য। তিনি বিবাহিত ছিলেন, তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তার বাবা মৃত মাহফুজুর রহমান এবং তার মা বেঁচে আছেন। কিন্তু গ্রামের বাড়ির সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই।

১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে দাঁত ভেঙে যায়, এই দাঁত ভাঙা বিষয়টি তাকে শনাক্তে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা। মজনু র‌্যাবকে জানিয়েছেন যে, তিনি একজন দিনমজুর ও হকার। কিন্তু তিনি এর পাশাপাশি ছিনতাই, রাহাজানি ও চুরির মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মজনু স্বীকার করেছেন যে তিনি একজন সিরিয়াল রেপিস্ট, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুক নারীকে তিনি ধর্ষণ করেছেন। তিনি মাদকাসক্ত এবং নিরক্ষর।

আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি জানান, মঙ্গলবার নিপীড়নের শিকার ওই মেয়ের মোবাইল ফোনসহ খায়রুল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মোবাইলটি খায়রুল অরুণা নামে এক নারীর কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন বলে জানান। পরবর্তীতে খায়রুলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অরুণাকেও আটক করা হয়। কুর্মিটোলা এলাকার অরুণা নামে ওই নারী কিনেছিলেন মজনুর কাছ থেকে।

ভিকটিমের দেয়া ধর্ষকের বিবরণ এবং অরুণার দেয়া মজনুর বিবরণ মিলে যায়। এতে র‌্যাব নিশ্চিত হয় যে, মজনুই সেই ধর্ষক। এতে বেশ কয়েকটি তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছিল জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমতো ধর্ষক নোয়াখালী অঞ্চলের ভাষায় কথা বলেন, তার দাঁত নেই, চুল কোকড়ানো এবং খর্বকায়; এসব তথ্য মিলে গিয়েছিল। পরে আটকদের দেয়া তথ্য এবং আমাদের মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে মিলিয়ে আজ ভোর ৫টার দিকে তাকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হই।

গেল রবিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসা রাজধানীর শেওড়ায় যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ভুল করে কুর্মিটোলা বাসস্টপেজেই নেমে পড়েন। এর কিছুটা পরেই শেওড়া এলাকার দিকে হেঁটে এগোতে থাকলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে ফুটপাতের ঝোপে নিয়ে ধর্ষণ করে।

ঘটনার দিনের বিবরণ দিতে গিয়ে এই র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সেদিন পথভুল করে কুর্মিটোলায় নেমে পড়ার পর ঢাবির ওই ছাত্রীকে সে গলা চেপে জাপটে ধরে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যান। এরপর মাটিতে ফেলে দিয়ে তাকে চর-থাপ্পর, ঘুষি দিতে থাকেন। হঠাৎ করে এমন একটি ঘটনায় হতবিহ্বল ওই ছাত্রী কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর ১০টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে তিনি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে দৌড়ে রাস্তার অপর প্রান্তে পালিয়ে যান। তার ফেলে যাওয়া ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ধর্ষক মজনু কুর্মিটোলায় তার পরিচিত অরুণা নামের এক নারীর কাছে যান। তার কাছে মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে প্রথমে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যান। সেখান থেকে রাতেই তিনি নরসিংদী চলে যান। তবে মঙ্গলবার তিনি সারাদিন বনানী রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করছিলেন।

ঘটনার সময় ওই ছাত্রীর জ্ঞান ফিরলে সুযোগ বুঝে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাস্তার অপর পাশে এসে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। আনুমানিক রাত ১০টার দিকে ওই শিক্ষার্থী রিকশায় করে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে সব খুলে বললে তিনি ও তার অন্য সহপাঠীরা মিলে প্রথমে তাকে হলে এবং পরে গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

পরেরদিন সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে ওই ছাত্রীর বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এ বিষয়ে আইনি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মজনুকে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।