যেভাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে ফিক্সিং করা হয়


ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ হয় ভিন্ন ভিন্ন দেশের ক্রিকেটার। কিন্তু জুয়ার পসরা সাজিয়ে ক্রিকেটারদের ফিক্সিংয়ে জড়ানোর মূল কাজটাই করেন ভারতীয়রা। সেই ভারতেই এবার আরও একবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো ফিক্সিং বিতর্ক। এরই মধ্যে কর্নাটক প্রিমিয়ার লিগে (কেপিএল) ফিক্সিং করার অপরাধে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এবং একজন ফ্রাঞ্চাইজি মালিককে গ্রেফতার করেছে ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ।

ভারতে ফিক্সিং নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেও ফিক্সিং বিতর্কে তুমুল তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল ভারতের জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগ আইপিএলে। মহেন্দ্র সিং ধোনির দল চেন্নাই সুপার কিংস, আইপিএলের প্রথম চ্যাম্পিয়ন রাজস্থান রয়েলস পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েছিলো দুই বছরের জন্য। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারও নিষিদ্ধ হন এ ইস্যুতে। যার ধারাবাহিকতা চলে আসছে কেপিএলেও।

কিন্তু কিভাবে ম্যাচ ফিক্সিং হয়ে থাকে ভারতীয় ক্রিকেটে? কেপিএলের ঘটনা সামনে আসার পর জানা যাচ্ছে, ফিক্সিংয়ের ভেতরকার নানা তথ্য। তেমনই জানা গেছে, কেপিএলে ফিক্সিং করার জন্য ক্রিকেটারদের দেওয়া হতো আইফোন। বিস্ফোরক এই দাবি করলেন কেপিএলেরই এক ক্রিকেটার। যা নিয়ে ক্রিকেটমহলে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

কেপিএলে ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ছয়জন ক্রিকেটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন ক্রিকেটার, একজন কোচ ও একজন ফ্যাঞ্চাইজি মালিকও রয়েছেন। পুলিশি গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে এসেছে যেন বড় এক গোখরা সাপ। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার মত অবস্থা।

ওই গ্রেফতার ঘটনার পরই টি-টোয়েন্টি লিগে খেলা ক্রিকেটারদের অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যার ফলে বেরিয়ে আসছে নিত্যনতুন তথ্য। এক ক্রিকেটারের দাবি, ‘আমাকে এক ক্রিকেটার এসে বলে গেল যে, আমাকে একজনের সঙ্গে শুধু দেখা করতে হবে। পরিবর্তে দেওয়া হবে আইফোন। একজন কোচ ছিলেন যার কাজই ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে বিতরণের জন্য ব্যাগ-ভর্তি আইফোন নিয়ে ঘোরা।’

২০০৯ সালের প্রথম কেপিএল থেকেই খেলছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন এক ক্রিকেটার বলেছেন, ‘যখন ওরা বুঝে গেল যে, কয়েকজন কিছুতেই ফিক্সিং করবে না, তখন ওরা সতর্ক হয়ে গেলো।’

বিসিসিআইর দুর্নীতি-দমন শাখার সাবেক প্রধান রবি সাওয়ানি গত মৌসুমে কর্নাটক প্রিমিয়ার লিগর দুর্নীতি দমন শাখার প্রধান ছিলেন। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)-এরও এই শাখার প্রধান ছিলেন তিনি। সাওয়ানি জানিয়েছেন যে, জুয়াড়ি এবং ফিক্সাররা অনেকবার ক্রিকেটারকে প্রস্তাব দিয়েছেন ম্যাচ সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টকে এটা প্রকাশ্যে আনতে হবে। আমরা দৈনিক ভিত্তিতে এর উপর নজর রাখি। যখনই কোনও ইস্যু থাকে, তা রিপোর্ট করা হয়।’

এক ক্রিকেটার এই ব্যাপারে বলেছেন, ‘আসলে মাথাতে সমস্যা থাকলে ক্রিকেটাররা রিপোর্ট করতে চায় না। এমনকি, নিজে ফিক্সিং করতে না চাইলেও কোচ, মালিকরা জড়িত থাকলে তা রিপোর্ট করা সহজ নয়। আমার অধিনায়ক যেমন সৎ ছিল। ও কিন্তু বুঝে ফেলেছিল, দলের মধ্যেই ভুলভাল কিছু হচ্ছে। আর তাই একেবারে শেশ মুহূর্তে ও কোন এগারোজন খেলছে, তা জানাত।’

এক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা বলেন, ‘রান তোলার গতি মন্থর হওয়ায় অধিনায়ক এক ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েছিলেন। পরে বোঝা যায় যে ইচ্ছাকৃত ভাবে রানের গতি মন্থর করা হচ্ছিল। কারণ, ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা সেটাই চাইত। সেই কর্তা সাফ বলেছেন, ‘স্লো ব্যাটিংয়ের জন্য অধিনায়ক এক সিনিয়র ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েছিল। অধিনায়ক ভেবেছিল খারাপ ফর্মের কারণেই এটা ঘটছে। পরে সে উপলব্ধি করে যে মন্থর ব্যাটিং আসলে ফিক্সিংয়েরই অঙ্গ।’

আবার এক ক্রিকেটার জানিয়েছেন, টস জিতে কী করতে হবে সে ব্যাপারে নির্দেশের জন্য তার দলের অধিনায়ক অপেক্ষা করতেন। তার দাবি, ‘ব্যাটিং না বোলিং, টস জিতলে কী করা হবে, তার জন্য নির্দেশ আসত। অপেক্ষায় থাকতেন অধিনায়ক।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *