যেসব আলেমের অংশগ্রহণে মুখরিত ছিল বিশ্ব ইজতেমা ময়দান


রোববার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত আলমি শুরার সাথীদের বিশ্ব ইজতেমা। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন রেকর্ড পরিমাণ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। বাদ যাননি কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থী ও দেশবরেণ্য পীর-মাশায়েখ এবং আলেম-ওলামা।

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করে রোববার পর্যন্ত প্রতিদিন বাদ ফজর শুরু হতো ইমান ও আমলের বয়ান। ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আজকারে মুখরিত ছিল টঙ্গীর তুরাগ তীর। চলছে দেশি-বিদেশি আলেম-ওলামা ও ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ নসিহত।

শুধু ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ছাত্র শিক্ষার্থীরাই নন, তিনদিন ধরেই সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও পীর মাশায়েখরা। কনকনে শীত উপেক্ষা করে ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের নিয়তেই ময়দানে উপস্থিত হন তারা, যা ইজতেমার মজলিসকে শতগুণ বেশি প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।

আল্লামা মাহমুদুল হাসানের অংশগ্রহণ
শুক্রবার সন্ধ্যায় ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হন মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমির ও যাত্রাবাড়ী জামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ার প্রিন্সিপাল আল্লামা মাহমুদুল হাসান। তিনি দেশি-বিদেশি আলেম ও তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের সঙ্গে ইলমি আলোচনায় অংশ নেন।

আল্লামা মাহমদুল হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ইলমি আলোচনায় অংশ নেন-
বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজ মসজিদের খতিব ও বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতের মুরব্বি হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, মুফতি ওবায়দুল্লাহ, মুফতি ওমর ফারুক ও রায়ভেন্ড মারকাজের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি মুফতি শফিকুল ইসলাম, মাওলানা আকবর শরীফ, মুফতি তাহের কুরাইশি।

শীর্ষস্থানীয় আলেম ও পীর-মাশায়েখ

দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখদের মধ্যে উপস্থিত হন-
>> মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস।
>> মাওলানা আব্দুল মালেক।
>> মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ।
>> মাওলানা মাহফুজুল হক।
>> মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ ফরিদী।
>> মাওলানা জাফর আহমদ।
>> মাওলানা শওকত হোসাইন।
>> শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
>> মাওলানা আব্দুল হামিদ (মধুপুরের পীর)
>> মাওলানা আরশাদ রাহমানি।
>> মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
>> মুফতি মুহাম্মাদ ওয়াক্কাস।
>> শায়খ সাজিদুর রহমান।
>> মুফতি রুহুল আমিন।
>> মাওলানা মোহাম্মদ আলি।
>> মাওলানা ইয়াহইয়াহ মাহমুদ।
>> মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী।
>> মুফতি ফয়জুল্লাহ (মাদানীনগর)।
>> মুফতি কেফায়তু্ল্লাহ আযহারি।
>> মুফতি মাসউদুল করীম।
>> মুফতি জাফর আহমদ (ঢালকানগরের পীর)।
>> মুফতি আবু সাঈদ।
>> মাওলানা আব্দুস সালাম।
>> মাওলানা মামুনুল হক।
>> মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি।

বিদেশি আলেম ও তাবলিগের শুরা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন-
>>মাওলানা আহমদ লাট, ভারত।
>> মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, পাকিস্তান।
>> আল্লামা মুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী, প্রধান মুফতি, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত।
>> মাওলানা ফারুক (ভাই ফারুক) ভারত।
>> মাওলানা জুহায়েরুল হাসান, ভারত।
>> মাওলানা ইসমাইল গোদরা, ভারত।
>> মাওলানা জিয়াউল হক, পাকিস্তান।
>> মাওলানা খুরশিদ আলম, পাকিস্তান।
>> মাওলানা নওশাদ, পাকিস্তান।
>> মাওলানা হাসমত উল্লাহ, পাকিস্তান।
>> মাওলানা বখতে মুনির, পাকিস্তান।
>> মাওলানা শাহেদ, পাকিস্তান।

কয়েক বছর ধরে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর কিছু বয়ন নিয়ে আপত্তি ওঠে। ওলামায়ে দেওবন্দ তার এসব বয়ানের ব্যাপারে তাকে নসিহত করেন এবং তা থেকে রুজু করার আহ্বান জানান। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে ২০১৮ সালে মাওলানা সাদ কান্ধলভী বাংলাদেশে এলেও বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

আগের বছর এ দ্বন্দ্ব পক্ষ-বিপক্ষ রূপ নেয়। ২০১৯ সালে এ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। পরে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ও সমঝোতায় দুই গ্রুপকে আলাদা ইজতেমা করার পরামর্শ দেন।

সে পরামর্শে এবার প্রথম ধাপে দেওবন্দের অনুসারী আলমি শুরার সাথীদের বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন হয় রোববার ১২ জানুয়ারি। এ ইজতেমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের খ্যাতিমান আলেমদের পদভাবের মুখরিত ইজতেমা ময়দান।

অন্যদিকে আগামী ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের দ্বিতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা।

উল্লেখ্য, আলমি শুরার সাথীদের ইজতেমায় মুসল্লিদের উপস্থিতি এত বেশি হয়েছিল যে, ময়দানে অতিরিক্ত খিত্তার ব্যবস্থায় তা সংকুলান হয়নি। রাস্তাঘাটে যে যেখানে স্থান পেয়েছে সেখানেই আমল, ইবাদত, ঘুম, রান্না ইত্যাদি সম্পন্ন করতে হয়েছে। পানি ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণেও পড়েছে চরম সংকটে। এ কারণেই এবার ময়দানে আলেমদের ইজতেমাকে দুই ভাগে আয়োজন করার দাবি ওঠায় শুরা কমিটি সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

এখন দেখার বিষয়, ২০২১ সালে দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে নাকি তা তিন পর্বে ধাবিত হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *