রথ শুরু হয়নি, পাখি বিক্রি শুরু


সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে রথমেলা শুরু হবে কাল থেকে। অথচ আজ থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে দেশীয় পাখি বিক্রি।

সিলেটে প্রতিবছরই রথযাত্রা উৎসবকে কেন্দ্র করে নগরের রিকাবীবাজারে গড়ে উঠে মেলা। সেই মেলায় অবাধে বিক্রি হয় দেশীয় পাখিসহ নানা প্রজাতির বিদেশী পাখি। আইন অনুযায়ী দেশী বিদেশী সব ধরনের পাখি বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও এই রথমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই দেশী বিদেশী পাখি বিক্রির জমজমাট আসর বসে।

বুধবার (৩ জুলাই) রিকাবীবাজার মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা দেশীয় পাখি নিয়ে আসেন মেলা প্রাঙ্গণে। এক যুবক খাঁচায় ৩টি শালিক পাখির বাচ্চা নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। পাখি দেখার জন্য তার খাঁচার সামনে স্কুলগামী শিশু কিশোরদের ভিড় করতে দেখা যায়। ২৫০ টাকা করে প্রতি পিচ পাখি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতা। এক পর্যায়ে ১৫০ টাকা দিয়ে ১টি পাখির বাচ্চা বিক্রি করেন এক কিশোরের কাছে। এভাবেই প্রায় ১ ঘন্টার ভিতরে ৩টি পাখির বাচ্চা বিক্রি করেন বিক্রেতা।

এসময় পাখির বাচ্চাগুলো তার কি না জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন পাখির বাচ্চাগুলো তার পোষা। কিন্তু পাখি মা কোথায় জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেন না।

মেলা প্রাঙ্গণের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আরো ২ থেকে ৩ জন খাঁচায় করে পাখি এনে বিক্রি করেছেন এখানে।

পাখি ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা মনে করেন, গত প্রায় ৫ বছর যাবত রথমেলার বিভিন্ন স্টলে পাখি বিক্রি করা হয়। স্টল ছাড়াও ভ্রাম্যমান ভাবে রাস্তায় বসে পাখি বিক্রি করেন বিক্রেতারা। তাই অনেক শিকারি রথমেলাকে কেন্দ্র করে পাখি বিক্রি শুরু করেন। কোনো পুঁজি ছাড়া ঝোপ জঙ্গল থেকে পাখি ধরে এনে বিক্রি করেন ভ্রাম্যমান পাখি বিক্রি করেন শিকরিরা। শিকারিরা অনেক সময় মা পাখিকে রেখে বাচ্চাদের নিয়ে এসে বিক্রি করে দেয়। অনেক সময় বাচ্চাদের রেখে মা পাখি ধরে এসে বিক্রি করে দেয়। যার ফলে দেশীয় পাখিরা বংশবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়ছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী সকল প্রকার দেশীয় পাখি ক্রয়-বিক্রয়, লালন-পালন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

আইনে বলা হয় ‘কোন ব্যক্তি তফসিল ১ ও ২ এ উল্লিখিত কোন পাখি বা পরিযায়ী পাখির ট্রফি বা অসম্পূর্ণ ট্রফি, মাংস দেহের অংশ সংগ্রহ করিলে, দখলে রাখিলে বা ক্রয় বা বিক্রয় করিলে বা পরিবহন করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটাইলে সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, রথমেলায় দেশীয় ও পরিযায়ী পাখি বিক্রির চেষ্টা করে থাকে একটি চক্র । বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে বন্যপ্রাণী ও পাখি বিক্রিরোধে মেলার শুরুতেই যেন ব্যবস্থা নেয়া হয় । পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকেও নিয়মিত নজরদারী রাখা হবে মেলায়। এবার পাখি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ সরাসরি মামলা দায়ের করবে বলে আশা রাখি।

এ ব্যাপারে সিলেটের রেঞ্জ কর্মকর্তা ( টাউন রেঞ্জ) দেলোয়ার রহমান বলেন, রথমেলাকে কেন্দ্র করে পাখি বিক্রি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। মেলা শুরুর পর থেকে আমরা নিয়মিত টহল দিব। ঝটিকা অভিযানও চলবে। তবে এক্ষেত্রে সুধী সমাজের বাসিন্দাদের এগিয়ে আসতে হবে। পাখি বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের তথ্য দিয়ে বন বিভাগকে সাহায্য করলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়।

তিনি আরো বলেন, অভিযানে পাখি জব্দ করার পর যদি পাখি বিক্রেতাকে পাওয়া যায় তাহলে তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করে শাস্তির আওতায় আনা যায়। এসব পাখি বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ারও সুযোগ আছে।

সিলেট বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, রথমেলায় আমাদের মনিটরিং টিম থাকবে। পাখি বিক্রি হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *