রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনের ঋণ


বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন খেলাপি ঋণভারে জর্জরিত, তখন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় ৩০টি কর্পোরেশনের মধ্যে ১৮টির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৩৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

এসব প্রতিষ্ঠানের নেয়া ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশই খেলাপি। ঋণের অঙ্কটি যে বিশাল তা বলাই বাহুল্য। এ অর্থ লোকসানি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার হলে জনগণ উপকৃত হতো। প্রকৃতপক্ষে এ অর্থ তো জনগণেরই। রাষ্ট্রীয় সংস্থার দায়-দেনা জনগণের অর্থে মেটানো কোনো কাজের কথা নয়। সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা।

ঋণগ্রস্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সবার আগে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এরপর চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ব্যাংক ঋণ ৬ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।

এছাড়া ঋণগ্রস্ত অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন, পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলছে এবং লোকসানের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। প্রশ্ন হল, ঋণ নিয়েও কেন তারা লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারছে না?

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনগুলোর ঋণ ব্যবহারে বড় ধরনের দুর্নীতি রয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব, কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় ট্রেড ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ, অধিক জনবল, ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, পেশাদারিত্বের অভাব, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা, মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়, অপচয় ইত্যাদিও প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের বড় কারণ।

আমরা মনে করি, বছরের পর বছর লোকসানি প্রতিষ্ঠান চালু রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনতে পারে না। এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করতে হবে সেগুলোকে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে। এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হলে বেসরকারিকরণের দিকে যাওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রেও এগোতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। অতীতে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান নামমাত্র দামে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পর সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এতে ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক কর্মী হয়ে পড়েছে বেকার। ফলে তৈরি হয়েছে সামাজিক সমস্যা। তাছাড়া ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকলে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পরও প্রতিষ্ঠান লাভজনক হতে পারবে না। কাজেই এটি যথাযথ সমাধান নয়। প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করার জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা দরকার। প্রয়োজন প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা সৃষ্টি করা।

লোকসানি প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে কীভাবে এগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়, তার দিকনির্দেশনা দিতে পারেন বিশেষজ্ঞরা। এটি অসম্ভব নয়। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করে লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। সরকারের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে, এটাই কাম্য।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *