রেমডেসিভির কী? করোনার আগে কিসে ব্যবহার হয়েছে এই ওষুধ


প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ এর কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে লেগেছেন একটা ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরিতে। এখনও সফলার মুখ দেখেননি। নির্দিষ্ট কোন ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় প্রচলিত নানা রকমের ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। তবে এসবের মধ্যেও আশার আলো হয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ইবোলার ওষুষ ‘রেমডেসিভির’। কভিড নিরাময়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দারুণ কাজ করছে এই ওষুধ। এরই মধ্যে রেমডেসিভিরকে কভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপানেও অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

চীনে রেমডেসিভিরের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়। চীনের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় আমেরিকাতেও। মার্কিন এপিডোমলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি দাবি করেন, যে সব করোনা-রোগীকে রেমডেসিভির দেওয়া হয়েছে, তারা অন্যদের থেকে ৩০ শতাংশ দ্রুত সুস্থ হয়েছেন। ফাউচির এই দাবি থেকেই করোনা-যুদ্ধে নতুন করে আশার আলো দেখেতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।

রেমডেসিভিরের মার্কিন ট্রায়ালে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ১০৬৩ জন রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল ওষুধটি। সেখানে দেখা যায় ১০ দিনের সাধারণ চিকিৎসায় যা ফল মিলছে, পাঁচ দিনেই সেই কাজ করে দেখাচ্ছে রেমডেসিভির।

এর আগে ইবোলা ভাইরাস যখন সারা বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছিল, তখন ইবোলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে এই ওষুধের সফল প্রয়োগ শুরু হয়। পরে এর অ্যান্টিভাইরাল ক্ষমতার উপর আস্থা রেখে মার্স ও সার্স ভাইরাসের সময়ও রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়।

রেমডেসিভির-এর কথা জানিয়ে তিনি ২৯ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন অ্যান্টনি ফাউচি। তাঁর কথায়, ‘রেমডেসিভির ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য জানাচ্ছে, ওষুধটির স্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে রোগীর শরীরে। ফলে তা দ্রুত রোগীকে সুস্থ করে তুলছে।’

ফাউচির দাবি, বহু পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে অন্যান্য ড্রাগগুলোর তুলনায় রেমডেসিভির প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রায় ১১ দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে। তিনি জানিয়েছেন, এই ওষুধ কতটা কার্যকরী হচ্ছে, তা বোঝার জন্য আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ৬৮টি জায়গায় ১ হাজার ৬৩ জন করোনা রোগীর উপর তা প্রয়োগ করে ট্রায়াল চালানো হয়। দেখা গেছে, তাতে আশ্চর্যজনক ফল মিলেছে। মৃত্যুপথযাত্রী অনেক রোগীকেই সারিয়ে তুলেছে এই ওষুধ। আর ওই ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারও শিকার হতে হয়নি।

এই রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হলে আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটা বাজারজাত করার কথা ভাবছে ওষুধটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গিলেড সায়েন্সেস। সংস্থাটির শেয়ারদরও ৯ শতাংশ বেড়ে গেছে। তবে বাজারজাত করার আগে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র সঙ্গে এই ওষুধ সম্পর্কিত নানা তথ্যের আদানপ্রাদান অব্যাহত রাখবে। ওষুধের প্রয়োগে কেমন ফলাফল আসছে, তাও সিডিসি-কে জানাবেন তাঁরা।

শুধু রেমডেসিভির নয়, করোনা প্রতিহত করতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, টোসিলিজুমাব, ফ্যাবিপিরাভিরের মতো ওষুধও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতে রেমডেসিভিরের মজুদ রয়েছে ৬০ শতাংশ। সেখানে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রয়েছে ৮১ শতাংশ। অন্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলির জোগান আছে ৭৯ শতাংশ।

রেমডেসিভির নিয়ে আশাবাদী ভারতের চিকিৎসকরাও। কলকাতার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, রেমডেসিভির নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ বিভাগের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। রেমডেসিভির নিয়ে এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ফলাফলও ভাল। এখন পরিস্থতি এমন যে, হাতে সময় নেই। ফলে যে সব ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কিছুটা ভাল ফল মিলছে, তাদের নিয়েই চিকিৎসা করতে হচ্ছে। রেমডেসিভির সে সব ওষুধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল কাজ দিচ্ছে। আইসিএমআর ভারতে এই ওষুধের প্রয়োগে সবুজ সঙ্কেত দিলে সরকারি ক্ষেত্রেও এই ওষুধের প্রয়োগ শুরু হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *