রোহিঙ্গারা এখন নিরাপদে তাদের দেশে প্রত্যাবর্তন করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী


রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালাতের রায়কে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের বিজয় উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা এখন নিরাপদে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করবে।

ইকুয়েডর সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এমন মন্তব্য করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে)-এর রায়ে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ এবং গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য বলা হয়।

এই রায়ের পর সন্ধ্যায় ফেসবুকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায়  পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক আদালত আজ রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এতে মানবতার জয় হয়েছে। এমন রায়ের জন্য আমি আদালতকে ধন্যবাদ জানাই। এটি মানবতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।। এই রায়ের ফলে আগামীতে নির্যাতন, জেনোসাইড, জাতিগত হত্যা বন্ধ হবে বলে আশা করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রায়ের ফলে মায়নমারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে আমি বিশ্বসা করি এবং মায়ানমার যা বারবার আমাদের অঙ্গীকার করেছে- তারা তাদের লোকদের ফিরিয়ে নেবে, এখন তারা তাদের লোকদের নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। সেইসাথে তারা আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা দেবে। আদালতের রায়েও তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এই রায়ে রোহিঙ্গাদের বিজয় হয়েছে। তারা এখন নিরাপদে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবন করবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ রায় ওআইসির বিজয়। গাম্বিয়ার বিজয়। বাংলাদেশের বিজয় এবং বিশেষ করে মাদার অব হিউম্যানিটির বিজয়।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত এ মামলায় আইসিজের আদেশে চারটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। এ চার আদেশ হলো-

১. রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ এবং গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ।
২. রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে আগামী চার মাসের মধ্যে মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। প্রথম প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রতি ছয় মাস পর পর একই ধরনের প্রতিবেদন আদালতের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।
৩. গাম্বিয়া ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালতের কাছে প্রয়োজনীয় বিষয়ে আবেদন করতে পারবে।
৪. মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রমাণাদি সংরক্ষণ করতে হবে।

এছাড়া গণহত্যা সনদের ২নং ধারা অনুসারে রোহিঙ্গাদের বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাবও দেন আদালত।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বরে মামলা করে গাম্বিয়া। গত ১০-১২ ডিসেম্বর এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার শুনানিতে নেতৃত্ব দেন দেশটির বিচারবিষয়ক মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন দেশটির নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি।