রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানে একমত ঢাকা-বেইজিং


দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মত হয়েছে ঢাকা ও বেইজিং।

শুক্রবার বেইজিংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই মতৈক্য হয়।

এদিন বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় দিয়াওউয়াতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘দুই নেতা প্রথমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সম্মত হয়ে বলেন, এটি অমীমাংশিত রাখা যাবে না।’

পররাষ্ট্র সচিব জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু’বছর পেরিয়ে গেছে। খবর বাসসের

দুই নেতাকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘কীভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। রোহিঙ্গারা অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে।’

শহীদুল হক বলেন, উভয় নেতা উল্লেখ করেন যে, এ ব্যাপারে দু’দেশের প্রতিনিধিরা এক সঙ্গে কাজ করবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তারা মিয়ানমারের ওপর ‘গুড উইল’ কাজে লাগাবে।

চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক মো. নজরুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা দেশের জন্য পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকে থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ চীনের ‘গুড উইল’ কামনা করে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ এর আগেও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

পররাষ্ট্র সচিব চীনের প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমরা চাই রোহিঙ্গারা ফেরত যাক।’

জিনপিং বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারে যেসব মন্ত্রী কাজ করেন তারা আবারো বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। আশা করা যায়, এতে এ সংকট নিরসনের আরেকটি সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টকে এ সংকটের বিষয়টি সুন্দরভাবে অবহিত করেন। ভোজ সভায়ও এ আলোচনা উঠে আসে।

শহীদুল হক বলেন, চীনের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে কিছু প্রশ্ন ছিল। আর প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্টকে তাদের ‘গুড উইল’ ব্যাবহারের অনুরোধ জানান।

জিনপিং বলেন, যেহেতু এটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টির সামনে উঠছে সেহেতু এর পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি বলেন, ‘আমরা এ সংকট সমাধানে যতটা সম্ভব চেষ্টা করবো। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’দেশেই আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু। আমাদের কাছে দু’দেশই সমান, কেউ কম বা বেশি নয়।’

চীনের প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দেন যে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দু’টিই যেহেতু উন্নয়নশীল দেশ, সেহেতু তারা (চীন) দু’দেশের স্বার্থই দেখবেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই নেতার মধ্যে বৈঠকটি খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা ছিল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও উন্মুক্ত, যা বিভিন্ন সমীকরণ ও রসায়নের বহিঃপ্রকাশ।

বৈঠক চলাকালে দুই নেতার অঙ্গভঙ্গি উৎসাহব্যঞ্জক ছিল উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘ প্রধানমন্ত্রীকে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা পরস্পরের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকব।’ তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকারের মধ্যদিয়ে দুই নেতার মধ্যকার সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছে।’

শহীদুল হক বলেন, ‘একই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই যে দু’দেশের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে একটি পরিণত আখ্যান এসেছে।’

চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে চীনের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা দুই প্রতিবেশী দেশ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছি।’

জিনপিং বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেন, দু’দেশ পরস্পরের উন্নয়ন থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই নেতা গুরুত্ব আরোপ করে বলেন যে তাদের গন্তব্য হল জনগণের উন্নয়ন।

তিনি বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট জাতীয় নীতি ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন বোঝাপড়া রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

জিনপিং দু’দেশ পরস্পরের চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকারসমূহ বুঝতে পারে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি সম্পর্কের পরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ।’

চীনের প্রেসিডেন্ট তার দেশ সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে উল্লেখ করেন বলেন, ‘আমরা আশা করি এটি ভবিষ্যতে আরো গভীর ও জোরদার হবে।’

দুই নেতা বলেন, তারা দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *