শাহজালালের ওরস শুরু আজ


ওলি কুল শিরোমণি হজরত শাহজালালের (র.) ৭০০তম ওরস আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) শুরু হচ্ছে। দুই দিনব্যাপী ওরসকে ঘিরে হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ এলাকায় সম্পন্ন করা হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

শান্তিপূর্ণভাবে ওরস সম্পন্ন করতে প্রশাসন এবং মাজার কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। ওরসের সার্বিক নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। দরগাহ এলাকায় বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা এবং মাজারের প্রত্যেকটি প্রবেশ দ্বারে বাড়ানো হয়েছে বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা। পুলিশ ও মাজার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, প্রতিবছর আরবি মাসের ১৯ ও ২০ জিলকদ দুই দিনব্যাপী হজরত শাহজালালের (র.) ওরস অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যদিও আজ সোমবার দিবাগত রাত থেকে পশু জবাই করার মধ্য দিয়ে ওরসের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ঐতিহাসিক গিলাপ চড়ানোর মাধ্যমে ওরস কার্যক্রমের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবেন শাহজালাল (রহ.) দরগাহ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। বুধবার সকাল বেলা শিরনি বিতরণ করা হবে।

বুধবারের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল, বাদ আসর শরবত বিতরণ এবং রাত ১০টার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বারের ওরসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।

হজরত শাহজালাল (র.) মাজার পরিচালনাকারী মুতওল্লি আমানুল্লাহ ইউসুফ এসব তথ্য জানান। মাজারের নিরাপত্তায় অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলেনও জানান তিনি।

এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা জানান, হযরত শাহজালালের (র.) টানে প্রতিবছর শত কষ্ট স্বীকার করেও হলেও ছুটে আসেন তারা। নিজেদের জীবনের সন্তুষ্টির পাশাপাশি ভক্তরা প্রার্থনা করেন দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য। কেবল ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাই নয় বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষের পদচারণয় দরগাহ প্রাঙ্গণ যেন হয়ে উঠে সাম্প্রদায়িক মিলনমেলার তীর্থভূমি। কয়েকদিন ধরে ভক্ত-আশেকানদের ভীড় বেড়েই চলেছে মাজার এলাকায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওরসে শরীক হতে আসতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকেই অবস্থান করছেন মাজারের আশপাশের হোটেলগুলোতে। আবার অনেকেই বাস ট্রাক নিয়ে এসেছেন, অবস্থান করছেন গাড়িতেই। ফলে সোমবার থেকেই মাজার এলাকা মুখর হয়ে উঠেছে হাজারো লোক সমাগমে।

ওরস উপলক্ষে সোমবার পর্যন্ত ভক্ত-আশেকানরা শতাধিক গরু ও খাসি এসেছেন নজরানা হিসাবে। সারাদেশ থেকে আসা ভক্ত-আশেকানদের মধ্যে শিরনি বিতরণের জন্য পশুগুলো জবাই করা হয়। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত জিকির ও এবাদত বন্দেগির মাধ্যমে ভক্তরা সময় অতিবাহিত করবেন। মঙ্গলবার রাত ৩টায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী ওরস শেষ হবে। মোনাজাতের পর পরই অগণিত ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে শিরনি। ওরসকে ঘিরে মাজার পাঙ্গণে বসতে শুরু করেছে বাউলদের আসর। শান্তিপূর্ণভাবে বার্ষিক এই উৎসব সম্পন্ন করতে মাজার কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।

আইন শৃঙ্খলার ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওরসের নিরাপত্তায় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে ওরসে আগমনকারীদের নিরাপত্তা পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ কাজ শুরু করেছে। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ইসলাম প্রচারের জন্য হযরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩৬০ সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেট আসেন। ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। সিলেটে তিনি যে টিলায় বসবাস করতেন, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। তার কবরকে ঘিরেই পরে গড়ে উঠেছে মাজার।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *