শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে সেই ‘গোপন ভাইরাস ল্যাব’র দায়িত্ব দিল চীন


চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে অবস্থিত ‘খুবই গোপনীয়’ ভাইরাসের ল্যাবরেটরির দায়িত্ব একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে দিয়েছে চীন। চেং ওয়েই নামের একজন মেজর জেনারেল ও জৈবঅস্ত্র বিশেষজ্ঞ এই ল্যাবে নিয়োগ পেয়েছেন।

কথিত রয়েছে, গোপন ভাইরাসের এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। আর এই ভাইরাস ফাঁস হওয়ার পেছনে দেশটির সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে। শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেয়ার আগে গত মাসের শেষের দিকে মেজর জেনারেল চেং ওয়েইকে উহানে নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় সরকার।

চীনা সরকারি কর্মকর্তারদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কীভাবে অতি দ্রুততম সময়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যায় তা নিয়ে কাজ করছেন ৫৪ বছরের চেং। ৩০ জানুয়ারি থেকে উহানেই একটি সুরক্ষিত জায়গা থেকে টিম নিয়ে এ কাজটি করছিলেন এই জৈবঅস্ত্র বিশেষজ্ঞ।

চীনের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ভ্যাকসিনের একজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ চেং। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে এক ধরনের মেডিকেল স্প্রে উদ্ভাবন করেন তিনি। তার এ উদ্ভাবনের ফলে চীনের প্রায় ১৪ হাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন চীনা রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইবোলা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের কারণে ‘টার্মিনেটর অব ইবোলা’ নামেও পরিচিত চীনের এই নারী শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা।

করোনাভাইরাস মোকাবিলা প্রসঙ্গে চেং বলেছেন, ‘এই মহামারি একটা সামরিক পরিস্থিতির মতো। এর উৎপত্তিস্থল যুদ্ধক্ষেত্রের সমান।’

তবে চেং ঠিক কবে থেকে উহানে রয়েছে সে বিষয়ে খুবই ধারণা রয়েছে চীনের গণমাধ্যমগুলোর। তবে প্যারিসভিত্তিক রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালে গত শনিবার দাবি করে বলেছে, ইতোমধ্যে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির দায়িত্ব নিয়েছেন চেং।

গোপন এই ল্যাবটি খোলা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পি৪ শ্রেণিভুক্ত ল্যাবটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের জৈব-সুরক্ষিত।

চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দৌবান ডটকমে প্রকাশিত একটি পোস্টের বরাত দিয়ে একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, উহানে করোনাভাইরাসের পেছনে ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি ও চীনা সেনাবাহিনীর যোগসূত্র রয়েছে। আর সন্দেহের কারণ হলো, এই ল্যাবটিতে জৈবঅস্ত্র নিয়ে গবেষণা করছিলেন চীনা সেনারা। এটা এমনি এমনি বাতাসে আসেনি। প্রতিবেদনটির তথ্যমতে, জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাইরাস লিক হওয়ার দাবিটি করা হয় মূলত দ্য ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে ড্যানি সোহাম নামের ইসরায়েলের সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জৈব অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দুর্ঘটনাক্রমে ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তবে অপর একটি সূত্র মতে, চীনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার নতুন করে ১২২ জনসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এখন ১৩৮১। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৪ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের এই ভাইরাসকে গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক হুমকি অভিহিত করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত তিনজন মানুষ মারা গেছে। এদিকের জাপানে নোঙ্গর করে রাখা একটি প্রমোদতরীতে নতুন করে আরও ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই প্রমোদতরীতে করোনাআক্রান্ত যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৮ জনে।

চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের সহকারী মন্ত্রী জেং ইশিন বলেন, ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ১ হাজার ১০২ জন চিকিৎসাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া হুবেই প্রদেশের অন্যান্য এলাকায় আরও ৪০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত। চিকিৎসা কর্মীদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছেই।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের আনুষ্ঠানিক নাম দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ১১ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হু’র প্রধান তেদরোস আদহানম জানান, নতুন এ রোগটি এখন থেকে COVID-19 নামে পরিচিত হবে। তিনি বলেন, ভাইরাসটির নামের CO দিয়ে করোনা, VI দিয়ে ভাইরাস, D দিয়ে ডিজিজ (রোগ) এবং 19 দিয়ে ২০১৯ সালকে নির্দেশ করা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *