সফল ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন আহমেদের সাথে কথোপকথন 

banglashangbad

ডেট্রয়েটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন আহমেদ কয়েক দশক ধরে মিশিগানে অত্যন্ত সফলতার সাথে  ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস ব্যবসা পরিচালনা করছেন।ভ্রমণ পিপাসা থেকে তিনি নিজেকে  ট্রাভেল ব্যবসার সাথে জড়িয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি স্বনামধন্য ফেয়ার স্কাই ট্রাভেলের স্বত্বাধিকারী  যেখানে হজ ও ওমরাহ ভিসা ইস্যু করা হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাঙ্গালীদের মধ্যে যারা নিয়মিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ  করতেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। “বাংলা সংবাদ” এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারেতিনিকথাবলেছেনপ্রবাসজীবন, ব্যবসায়িক সফলতা , মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।

আমেরিকাতে আগমন ও আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে  কিছু বলুন।

আমি ১৯৬৯ সালে দশম শ্রেণী পাস করে আমেরিকায়  স্টুডেন্ট  ভিসা পেয়ে পড়াশোনার জন্য আসি। তখন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে অনেক লোক মারা যায়। আমরা কয়েকজন মিলে রিলিফ ফান্ড কালেক্ট করা শুরু  করি। মর ফিশ নামে একজন জুশিক্ষক এক্ষেত্রে আমাদেরকে সহায়তা করেন। পরবর্তীতে আমি টেক্সাস সেন্ট্রাল কলেজ থেকে অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রী ইন অফিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গ্রহণ করি।

আপনার কর্মজীবনের শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

১৯৭৭ সালের ফোর্ড মোটর কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করি। মিশিগানে তখন বাংলাদেশি  খুব একটা নেই বললেই চলে। আমি তখন খুব  ভ্রমণপিপাসু ছিলাম। অন্য দেশের  সংস্কৃতি ও তাদের ঐতিহাসিক স্থান দেখার খুব ইচ্ছা ছিল আমার। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে যেহেতু সেবার সাথে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার সুযোগ থাকে সেহেতু আমি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করলাম। তখনকার দিনে এয়ারলাইন্সগুলো এজেন্টের ইন্সেন্টিভ হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্য শহরে যাওয়ার জন্য এয়ার টিকেট অফার করত। পরবর্তীতে আমি ফোর্ড মোটর কোম্পানি থেকে অবসর গ্রহণ করে  আইএটিএ ও এনআরসি তে এপ্লাই করি এবং অ্যাপ্রভালও পেয়ে যায়। এরপর পুরো উদ্যমে এজেন্সিতে কাজ শুরু করি।

প্রথম দুই বৎসরএজেন্সিচালাতেবেশসমস্যারসম্মুখীনহতেহয়।এজেন্সিচালাতেহিমশিমখাচ্ছিলামকিন্তুশুভাকাঙ্খীরা ব্যবসা চালিয়ে যেতে আমাকে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। এরপর ১৯৯৩  সালে মিশিগানে লোকজন আসতে শুরু করে এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ বিমান নিউইয়র্কে  চলাচল শুরু করে। এরপর কুয়েত, আমিরাত, কাতার এয়ারলাইন্সে স্টক হোল্ডার নেই। এভাবে সফলতা আসতে শুরু করল এবং ব্যবসা দিন দিন বাড়তে লাগল। বর্তমানে আমরা দেশি ও বিদেশি ক্রেতাদের উত্তম সেবা দিয়ে  আসছি।

আপনার প্রতিষ্ঠান ফেয়ার স্কাই ট্রাভেলসম্পর্কে কিছু বলেন। এখন কয়টি ব্রাঞ্চ আছে?

ফেয়ার স্কাই ট্রাভেলে হজ প্যাকেজ  ও  ওমরা প্যাকেজে  আমরা ওমরাহ ভিসা ইস্যু করি। আমাদের এজেন্সি সৌদি হাজ্জ মিনিস্ট্রি কর্তৃক অনুমোদিত।

দেশের বাইরে ফেয়ার স্কাই ট্রাভেলের বর্তমান কোনো ব্রাঞ্চ নাই। নিউ ইয়র্ক জ্যাকসন হাইটস এ   ছিল কিন্ত ২০০৬ সালে  বন্ধ করি , কারন দুটো ব্রাঞ্চ এক সাথে আমার একার পক্ষে চালানো বেশ কষ্টসাধ্য  ও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তাছাড়া বিশ্বস্ত লোক পাওয়া বেশ কঠিন। আলহামদুলিল্লাহ  মিশিগানে অবস্থিত একমাত্র ব্রাঞ্চ সুন্দর ভাবে চালাচ্ছি।

বর্তমানে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা আমেরিকাতে কতটা চ্যালেঞ্জিং?

এই শতকে আমেরিকা বা দুনিয়ার সব দেশের ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা মেইনটেন করা কঠিন যদি ইথনিক সাপোর্ট না থাকে। মিশিগানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক  বাংলাদেশি  থাকার জন্য এবং সাথে সাথে অন্যান্য স্টেট থেকে প্রচুর বাঙালি এখানে আসার জন্য একটি বড় কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। সুতরাং এসব কারণে ব্যবসাটা চ্যালেঞ্জিং হলেও এখানে সুন্দর ভাবে চালিয়ে নিতে পারছি। আমরা টিকিট বিক্রির পাশাপাশি হজ ভ্রমণের  উত্তম সেবা প্রদান করে থাকে। তবুও  আমরা ৪০ % ক্লায়েন্ট হারিয়েছি শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে  টিকিট বিক্রি হবার কারণে।

আমেরিকা থেকে হজ করতে গেলে কিকি নিয়ম অনুসরণ করতে হয়?

সকল মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে নির্দিষ্ট প্রসিডিউর এর মাধ্যমে হজ ভিসা পাওয়া গেলেও আমেরিকা থেকে হজ ও উমরা  ভিসা সহজ উপায়ে পাওয়া যায়। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশের যাওয়ার পথে   বা  শুধু  ওমরার জন্য  ই ভিসা ইস্যু  করি। এক্ষেত্রে আবেদনকারীকে পাসপোর্টের ফটোকপি, বিবাহিত হলে কাবিননামা বা বিবাহ সার্টিফিকেট, সন্তানদের বেলায় জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট ও ভ্যাকসিন (মেনিনজাইটিস)  সার্টিফিকেট জরুরি।

মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও আপনি আমেরিকাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশীদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। আন্দোলনটা কিভাবে গড়ে তুলেছিল?

১৯৭০ সালে বাংলাদেশে ইলেকশনের পর এবিসিএ,এনবিসি,  বিবিসি,  আইটিবি  ও নিউজ রেডিও ৮৮ (নিউ ইয়র্ক ) থেকে শুনতে পায় বাঙালি জাতিকে স্বাধীন করার জন্য কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর  জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা। ভাবতে থাকি কিভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা যায়।  যা ভাবা তাই কাজ। আমেরিকান আর্মি থেকে ট্রেনিং নিতে শুরু  করলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে  আমরা স্কুলে ক্লাস না করে প্রত্যেক সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সামনে মিছিল ও সমাবেশ করতাম।  তখন  এ এইচ মাহমুদ আলী পাকিস্তান কনস্যুলেট এর  ভাইস কনস্যুলেটর ছিলেন। আমরা তাকে ইস্তফা দিতে জোর করি এবং উনি প্রথম বাঙালি কূটনীতিবিদ হিসেবে পাকিস্তান কনস্যুলেট থেকে ইস্তফা দেন।  আমরা মিশিগান ও নিউইয়র্ক  থেকে ২০-২৫ জন লোক গিয়েছিলাম ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতিবাদ মিছিল করার উদ্দেশ্যে। ওয়াশিংটনে আমরা স্টেট ডিপার্টেন্ট , ওয়াল্ড ব্যাংক ও হোয়াইট হাউস এর সামনে মিছিল  ও সমাবেশ করি।  রাত্রে অবস্থান নিয়েছিলাম প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসায়। উনি তখন  পাকিস্তান এম্ব্যাসি তে ডেপুটি সেক্রেটারী হিসেবে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে চাকরিরত।অর্থাৎতিনিচাকরিথেকেইস্তফাদেননি।তৎকালীনমুজিবনগরসরকারেরঅনেকেআমেরিকাতেঅবস্থানকরেছিলেন।এদেরমধ্যেছিলেননজরুলইসলাম, বিচারপতি আবু সাঈদ  ও  খন্দকার মোশতাক।  ওনারা রুচিতা বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে ডিনার করার জন্য আসতেন। আমি তাদেরকে খাবার সার্ভ করতাম।  রেস্টুরেন্টটি ছিল আমার  চাচা আব্দুল খালিক   ও  ফুপাতো ভাই  রিয়াজ উদ্দিনের  ।

তখনও আমি আমেরিকান আর্মিতে ট্রেনিং  নিচ্ছি । কিন্তু আমার সার্ভিস ( আর্মি) শেষ হবার আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হল। খুব খুশি হলাম এবং আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়  করলাম। উল্লেখ্য আমি ট্রেনিংয়ে ছিলাম ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত।

সব থেকে দুঃখের বিষয় ১৯৭৯  ও ১৯৮৩  সালে বাংলাদেশ আমি ইনভেস্ট করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তখন দেশে সুশাসনের বড়ই অভাব ছিল। দেশে রেমিটেন্স পাঠালে সেটা ফরেন কারেন্সি হয়ে যেত। আলহামদুলিল্লাহ আমেরিকাতে আইন এবং বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর।

বাংলা সংবাদ এর সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আমাকেও কথা বলার সুযোগকরে দেবার জন্য ‘বাংলাদেশ সংবাদ’ কে  ধন্যবাদ জানান।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *