সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা আরো বাড়ানো হলে করুণ অবস্থা হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি যুক্তিযুক্ত নয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২৯ থেকে ৩০ বছরে গিয়ে পাসের হার যেভাবে কমে তাতে আরো বাড়ালে কী অবস্থা হবে? তখন তো ছেলেমেয়ে সামলাতে হবে, সংসার করতে হবে আর পরীক্ষা দিতে হবে। তখন আরো করুণ অবস্থা হয়ে যাবে। একটা কাজ করার তো একটা সময় থাকে, এনার্জি থাকে।”
সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সদ্যসমাপ্ত চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা বাড়ানোর আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “এই দাবিটা তোলার জন্য তারা নিশ্চয়ই কারো কাছ থেকে কোনো সুবিধা বা অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। শুধু দাবি তোলার জন্য দাবি করা হলে পরিণতি কী হতে পারে তা আমি জানি না।”
সংবাদ সম্মেলনে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদকর্মী জয়দেব দাসের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে প্রধামন্ত্রী বলেন, “বয়সসীমা ৩৫ করা হলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে প্রশিক্ষণ নিতে নিতে আরো দুই বছর। তাহলে ৩৭ বছর বয়সে চাকরিতে যোগ দিলে কীভাবে হবে। চাকরিরও তো সময় ২৫ বছর না হলে পেনশনের পুরো টাকা পাবে না।”
৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার পাসের হারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পাসের হার হলো ৪০.৭ ভাগ। ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের পাসের হার ৩০.২৯ ভাগ। আর ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সের যারা তাদের পাসের হার হলো ১৩.১ শতাংশ। এ ছাড়া ২৯ বছরের ঊর্ধ্বে যারা, তারা পাস করেছে ৩.৪৫ ভাগ।”
৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২৩ থেকে ২৫ বছর যাদের বয়স তাদের ৩৭.৪৫ ভাগ পাস করেছে। আর ২৫ থেকে ২৭ বছর বয়সীদের ৩৪.৭৮ ভাগ পাস করেছে। ২৭ থেকে ২৯ বছর বয়সী পরীক্ষার্থীদের পাস করেছে ১৪.৮৯ ভাগ। ২৯ বছরের ঊর্ধ্বের বয়সীদের মধ্যে ৩.২৩ ভাগ।”
একইভাবে ৩৭তম বিসিএসেরও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“এখন যেহেতু জন্ম নিবন্ধন হয়, বয়স লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের ছেলেমেয়েরা ১৬ বছর বয়সেই এসএসসি পাস করে ফেলে। তারপর দুই বছর লাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করতে। এর চার বছর পর অনার্স। তার এক বছর পর মাস্টার্স পাস করে, অর্থাৎ ২৩ বছর। সে বছর থেকেই পিএসসি পরীক্ষা দিতে পারে। তারপরও যদি দেরি হয়, ২৫ বছর লাগতে পারে।”
চীন সফরের ফলাফল নিয়ে আজ সোমবার বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে চীন সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা-সংক্রান্ত নয়টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য এলওসি (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন-সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক । এ ছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের সঙ্গে দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ।
চীন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে নাগরিক সংবর্ধনা এবং চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা তিয়েনআনমেন স্কয়ারে হিরোস মেমোরিয়ালে চীনা বিপ্লবের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।