‘সহায় সম্বলহীনদের আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে সরকারি সহায়তায়’


ডেস্ক রিপোর্ট ::  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এসিডে দগ্ধ, প্রতিবন্ধী, সহায় সম্বলহীন যারা বিচার পেতে অক্ষম তাদেরকে সরকারি সহায়তায় আইনি সেবা দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন আদালতে সুষ্ঠু বিচার পায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

আজ রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস-২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায় বিচার পাক। বিচার না পেয়ে আমরা যেমন কেঁদেছি এমন যেন আর কেউ না কাঁদে। গণতন্ত্র না থাকলে যেমন আইনের শাসন সুষ্ঠু হয় না তেমনি আইন না থাকলে গণতন্ত্র সু্প্রতিষ্ঠিত হয় না। ’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মানুষ যেন সুষ্ঠু আইন সম্পর্কে জানতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু জেলা নয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে আইনি সহায়তা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা এজন্য প্রতিটি জেলায় জাতীয় আইনগত সহায়তা অফিস স্থাপনাসহ সেখানে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মামলাজট থেকে মুক্তি পেতে আপসযোগ্য মামলা নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর ফলে অতিরিক্ত ব্যয় ছাড়া মানুষ এর সহায়তা পাবে। আমরা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সার্ভিসও চালু করেছি। এজন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কীভাবে অফিসাররা কাজ করবে। অনেককেই আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অনেক মামলা নিষ্পত্তিও হয়েছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে মেয়েদের সম্পত্তি দেওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই তাদের সম্পত্তির ভাগ দিতে চান না। অনেক ভাইয়েরা তাদের বোনকে সম্পত্তির ভাগ দেন না। এটি শুধু নিম্নবিত্ত নয় উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রেও ঘটে। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে যারা সাবেক বিচারপতি আছেন আমি তাদের অনুরোধ করবো, যে সম্পত্তির ওপর মেয়েদের অধিকার রয়েছে সেটুকু যেন তাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে না পারে এর একটি সুরাহা বের করতে। সন্তান ছেলে হোক, মেয়ে হোক তার সম্পত্তির ভাগ যেন সে পায়।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যারা অসহায়, দরিদ্র তাদের সহায়তা করছি এটা ঠিক। কিন্তু অন্যায়ের শিকার অনেক সময় অর্থশালী সম্পদশালী পরিবারও হয়ে থাকে। বিশেষ করে যদি বাবা মা মারা যায় অনেক সময় মেয়েরা সম্পত্তির যে উত্তরাধিকার…অনেক সময় মেয়েরা বঞ্চিত হয়, সম্পত্তি তারা পায় না। ভাইয়েরা দিতে চায় না। অনেক সময় সম্পদশালী পরিবারের ভেতর অমানবিক আচরণ আমরা দেখতে পাই। মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার মানুষই হয়। এই যে সামাজিক অবিচারটা হয় এদিকেও আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টেও অসহায়, দুস্থ বিচারপ্রার্থীরা সরকারি আইনিসেবা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত দশ বছরে তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে এ কার্যক্রমের আওতায় মোট এক লাখ ৬৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।লিগ্যাল এইড অফিসের সফলতার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে গত চার বছরে প্রি-কেইস ও পোস্ট-কেইস মিলিয়ে মোট ১৭ হাজার ৯২৯টি এডিআর বা আপস মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫১৩ জন বিচারপ্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে আপস-মীমাংসার সুফল ভোগ করেছেন।মামলা দীর্ঘসূত্রতা ও জট কমাতে অধঃস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ, নতুন নতুন আদালত, ট্রাইবুন্যাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ, উচ্চতর প্রশিক্ষণসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগ এবং ই-জুডিসিয়ারি প্রকল্পের কথাও বলেন তিনি।অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।