সিলেটেও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আক্রান্ত ৫৩ জন


সিলেটে ক্রমেই বেড়ে চলছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ জন।

এরআগে সোমবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছিলো।

ঈদের পর সিলেটে ডেঙ্গু আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিভাগের। এজন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। নগরজুড়ে সিসিকের পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানোর পাশপাশি নগরবাসীকেও নিজেদের বাড়িঘর ও আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৭ জন। নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ জন। এছাড়া হবিগঞ্জে ৩জন, মৌলভীবাজারে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়েছেন।

সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. দেবপদ রায় বলেন, আমরা প্রতিটি সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ খবর রাখছি। এখন পর্যন্ত সিলেটে যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন তার বেশিরভাগই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। তাই বলে সিলেট যে এডিস মশা মুক্ত তা বলা যাবে না। তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হচ্ছে সামনে ঈদের ছুটিতে যারা বাড়ি আসবেন তাদের নিয়ে। ঢাকা থেকে যারা ছুটিতে সিলেট আসবেন তাদের অব্যশই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। তাদেরকে মশারির নিচে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে প্রধান কাজ হচ্ছে সচেতন থাকা। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা। ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত এই মশা কামড়ায় তাই ওই সময়টাতে ফুলহাতা কাপড় পরার চেষ্টা করা। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অব্যশই মশারি টানানো। আর যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গেছেন তাদের শরীর থেকে ডেঙ্গুর জীবানু বের না হওয়া পর্যন্ত সব সময় মশারির ভিতরে রাখা। তা না হলে তার মাধ্যমে সহজেই ডেঙ্গ ছড়িয়ে পড়বে।

এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেক রোগী সিলেটে সনাক্ত হয়েছেন। তবে এদের বেশিরভাগ রোগীই ঢাকা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সিলেটে এসেছেন। তাই আমাদের আগে জানতে হবে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা সিলেটে কোন এলাকায় কি পরিমান আছে। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে জরিপ করার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ও ডেঙ্গু বিষয়ে মনিটরিং সেল গঠন করেছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ওইসব এলাকায় পাঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানির নমুনা, এডিস মশার লাভা সংগ্রহ করছি। আশা করি ২ দিনের ভিতর সব এলাকার তথ্য আমাদের কাছে চলে আসবে। এরপর যে এলাকায় এডিস মশা পাওয়া যাবে সেসব এলাকায় সচেতনতামূলক কাজের পরিধি বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সর্তকতা জারী করা হয়েছ। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে সার্বক্ষনিক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। আমরা নগরের বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক বিল বোর্ড লাগাচ্ছি। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। সিলেটে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা। তবে এই কাজে জনসাধারণের সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্তীকে প্রধান করে ইতোমধ্যে আমার একটি কমিটি গঠন করেছি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।