সিলেট বিভাগে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। সময় যত যাচ্ছে- দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন বাকি জীবন।
বেপরোয়া চালকদের অনিয়ন্ত্রিত গাড়িচালনা, চালকদের অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা, সড়ক নির্মাণে ত্রুটি এবং জনসাধারণের অসচেতনতা এসব দুর্ঘটনার কারণ বলে জানা গেছে। সর্বশেষ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার দরগা গেইট এলাকায় আজ দ্রুতগামী ইউনিক বাসের চাপায় এক পথচারি নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার দরগা গেইট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গতকাল শুক্রবার একই দিনে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন।
গতকাল হবিগঞ্জের বাহুবলের ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে দুই মহিলা ও গাড়ির হেলপার নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫জন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কামাইছড়ার অদূরে পাহাড়ি বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। নিহতরা হলেন- বাসের হেলপার সদর উপজেলার মড়ুরা গ্রামের আবু সাঈদ (৩০) ও একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের কন্যা কমলা বেগম (৩৫) এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের রিতা দেবনাথ (২৮)। শ্রীমঙ্গল থেকে হবিগঞ্জগামী যাত্রীবাহী বাস হবিগঞ্জ-ব ০৫-০০৩১ কামাইছড়া পাহাড়ী এলাকায় পৌঁছলে সড়কের একটি বাঁকে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে বাসটি পাহাড়ের নিচে খাদে পড়ে যায়।
অন্যদিকে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি এলাকার মিনাজপুর নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নানু মিয়া নামের ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি মিনাজপুর গ্রামের বাসিন্দা।
একই দিনে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের চিতলি-ফতেহপুর নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিশু তামান্না বেগম (৮) ওই ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের বজলু মিয়ার কন্য। শিশুটি স্থানীয় চিতলিয়া কওমি মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা অবৈধ অটোরিকশার চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ওই শিশুকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তামান্না মারা যায়।
অপরদিকে, মৌলভীবাজারের রাজনগরে ট্রাকের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু ঘটেছে। গতকাল বিকেলে উপজেলার ধামাইরপাড়া এলাকায় বিআরটিসির একটি ট্রাক পেছন থেকে ওই মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেল চালক ফজল মিয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। তিনি উপজেলার মিয়ারকান্দি গ্রামের মৃত শওকত মিয়ার ছেলে। এ দুর্ঘটনায় আনু মিয়া নামের মোটরসাইকেল আরোহী অপরজন আহত হন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করা সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’-এর গত বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী- সিলেট বিভাগের চার জেলায় ২০১৮ সালে ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৯৫ জন মানুষ এবং আহত হন ৪৯৯ জন। ২০১৯ সালে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৪০টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬১৮ জন মানুষ ও আহত হন ২৩৮ জন। নিসচা বলছে, ২০১৮ সালের চেয়ে সিলেট বিভাগে সড়ক দুর্ঘটানয় ২০১৯ সালে ৪২৩ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন।