সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া উদয়নের পুরোনো বগিতে ছিলো অতিরিক্ত যাত্রী


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষের আগে সিলেট থেকে ৭০৩ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল উদয়ন এক্সপ্রেস। উদয়নের আসন সংখ্যা ১৬টি বগিতে ৬২২টি থাকলেও ঘটনার রাতে মোট যাত্রী ছিল ৭০৩ জন। তার ওপর প্রায় প্রতিটি বগিই ছিল নড়বড়ে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান বলেন, উদয়নের ১৬টি বগি রয়েছে। যার আসন সংখ্যা ৬২২টি। তবে দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটিতে মোট যাত্রী ছিলেন ৭০৩ জন। এই রুটের নিয়মিত চলাচলকারী এই ট্রেনটি প্রতিদিনের মতো সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত পৌনে ৯টায় ১৬টি বগি নিয়েই সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেল স্টেশনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকামুখী তূর্ণা নিশীথার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ যাত্রী নিহত ও আরও শতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্বল বগি দিয়ে চালানোর অভিযোগ উঠেছে। নড়বড়ে বগি দিয়ে সিলেট রুটে শুধু উদয়নই নয়, সবকটি ট্রেন চলাচল করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাছাড়া ডাবল লেন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা) কাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, উদয়নের বগিগুলো পুরোনো বলা যাবে না। বিভিন্ন সময় বগিগুলো যুক্ত করা হয়েছে। মূলত তূর্ণার ইঞ্জিন উদয়নের পেছনের তিনটি কোচে আঘাত করেছে। সে কারণে উদয়নের কোচগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা নামে দুটি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। উদয়ন ও পাহাড়িকার যাত্রা শুরু ১৪টি বগি নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে এ সংখ্যা কমিয়ে করা হয় ৯টি। তাছাড়া, নড়বড়ে বগি দিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবশেষে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে এসব ট্রেনে বগির সংখ্যা ১৬টি করা হয়।

২০১৪ সালে সিলেট-ঢাকা রুটে ১৪টি বগি নিয়ে যাত্রা শুরু করে কালনি এক্সপ্রেস। এরপর বগি কমিয়ে আনা হয় চারটিতে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই চারটি বগি নিয়েই যাত্রী পরিবহন করে ট্রেনটি। ২০১৮ সালের শুরুর দিক থেকে আটটি বগি করা হয়েছিল। পরে আরও একটি বগি কমিয়ে দেয়া হয়। জয়ন্তিকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস মাঝখানে কমে ১২টি বগি নিয়ে চলাচল করে। পরে অবশ্য আরও চারটি বগি যুক্ত করা হয়। পারাবত এক্সপ্রেসে ১৫টি থেকে তিনটি কমানো হলেও এখন ১৬টি বগি নিয়ে চলছে।

১৮৯১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বাংলার পূর্ব দিকে রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় আসামে চা রোপণকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে। ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ বাড়ে। ১৯১২-১৫ সালে কুলাউড়া-সিলেট রুট খোলা হলে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন চালু হয়। এই রুটে মিটার গেজে চলাচল করছে ট্রেন। ডাবল লেন লাইনের দাবি এই এলাকার মানুষের অনেক পুরোনো।

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, আখাউড়া-সিলেট মিটারগেজ রেলপথটি ডুয়েল গেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। রেলওয়ের স্মরণকালের ইতিহাসে বৃহৎ ব্যয়ে এই লাইনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া- সিলেট লাইন রেললাইন আধুনিক ডুয়েলগেজ করাসহ এই রুটের আরও বেশ কয়েকটি রেল স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হবে।

সৌজন্যে :: জাগোনিউজ২৪


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *