সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু হতে পারে ৮ মে থেকে


উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণের পর পুরো উড়োজাহাজ, প্রত্যেকটি আসন সংক্রমণমুক্ত করতে হবে। দূরত্ব বাজায় রাখতে অন্তত ৩০ শতাংশ আসন খালি রাখতে হবে। প্রত্যেকটা যাত্রীকে নতুন মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহ করতে হবে। ইনফ্লাইট খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। এমন বেশ কিছু শর্তে আবারো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমানবন্দর ও বিমানসংস্থাগুলো।

করোনাভাইরাসের কারণে ৪৭ দিন বন্ধ থাকার পর ৮ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিমান চালুর অনুমতি দিতে পারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে বিমান সংস্থাকে।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, যদি আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয় এবং আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেই তাহলে ৮ মে থেকে আমরা বিমান চলাচল শুরু করতে চাই। তবে সেটি হবে সীমিত পরিসরে এবং প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে। আমরা এয়ারলাইনস এবং বিমানবন্দরগুলোকে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলেছি।

তিনি বলেন, আমরা এয়ারপোর্ট এবং বিমান সংস্থাকে কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছি। এর মধ্যে আছে-এয়ারলাইনসগুলোকে এবং বিমানবন্দরগুলোকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রী আসা থেকে শুরু করে বিমানের ভেতর পুরো ছিটে যাত্রী নিতে পারবে না। একটা এয়ারপোর্টে ডমেস্টিকে তিনটি প্লেন একসাথে যাওয়ার সক্ষমতা আছে। একটি প্লেন যাওয়ার ৪৫ মিনিট পর পরবর্তী প্লেনের যাত্রী আসবে। প্রত্যেকটি উড়োজাহাজ অবতরণের পর সংক্রমণমুক্ত করাসহ বেশ কিছু সুরক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। এগুলো কিভাবে করতে হবে তার বিস্তারিত নীতিমাল করেছি।

ডমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল উভয় গন্তব্যই উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা জানিয়ে বেবিচকের প্রধান আরো বলেন, আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যারা আমাদের অনুমতি দেবে সেই সব দেশে আমরা ফ্লাইট চালাবো। আগামী ৩ মের মধ্যে এটা চূড়ান্ত করবো। ইউএস-বাংলা যেহেতু চীনে ফ্লাইট পরিচালনা করছে, তাদের প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট আছে। আমরা অন্যদেরকেও বলেছি, এগুলো সংগ্রহ করার জন্য।

দেশের সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ৭ মে পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে বিমানচলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেবিচক। করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমে ২১-৩১ মার্চ পর্যন্ত যাত্রীবাহী সব বিমান সংস্থার ফ্লাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় বেবিচক। এ সময়সীমা কয়েক দফায় বাড়িয়ে ৭ মে করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান সংস্থাগুলো। অন্যদিকে বেবিচকেরও আয় কমে গেছে।

বেবিচকের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব রকমের সুরক্ষানীতি মেনে একমাত্র আমরাই চীনের গুয়াংজুতে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সৌভাগ্য যে, এই ফ্লাইটে আমাদের কোনো কেবিন ক্রু কিংবা কোনো সহকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এমনকি কোনো যাত্রীও সংক্রমিত হয়েছে বলে আমরা জানতে পারিনি। গত নভেম্বর থেকে উড়োজাহাজ সংক্রমণমুক্ত রাখতে যা ইকুইপমেন্ট, জনবল দরকার তা আমরা নিশ্চিত করেছি। ডমেস্টিকেও আমরা এটা নিশ্চিত করবো।’

তিনি বলেন, ফ্লাইট উড্ডয়নের আগে সয়ংক্রিয় ইনফ্রারেড থার্মেমিটারে সব যাত্রীকে পরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়া যাত্রীদের মাস্ক, গ্লাভস সরবরাহ এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ফ্লাইটে বসানো হবে। প্রতিটি উড়োজাহাজ অবতরণের পর প্রতিটি সিট জীবানুমুক্ত করা হবে। এমনকি বাসগুলোকেও প্রতিবার জীবানুমুক্ত রাখা হবে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, অভ্যনন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় আগামী ৭ মে পর্যন্ত বেবিচকের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে তারা ৮ মে থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি করছেন। এয়ারলাইনসগুলোও তাদের টিকিট বিক্রি ও ফ্লাইট শিডিউল খোলা রেখেছেন। তবে সরকারি সিদ্ধান্তে ফ্লাইট বন্ধ থাকলে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট চালুর ক্ষেত্রে কী কী ঝুঁকি আছে, একই সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় এয়ারলাইনসগুলোর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কতটা ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে বেবিচক। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *